সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী সারাদেশে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ জেলার ২৭ উপজেলা
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বুধবার সকাল থেকে ভারতের উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাব থেকে বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। তবে ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় ৯ জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সার্বিক ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এ কথা জানান। ভোলার লালমোহন উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে একজন মারা গেছেন বলেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
বুধবার সকালে থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি এখনও অতিক্রম করছে, আশা করি বিকেল ৪টা নাগাদ এটি উড়িষ্যা অতিক্রম করবে। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বলেও জানান এনামুর রহমান।
তিনি জানান, অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, শরণখোলা, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, মঠবাড়িয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, চরফ্যাশন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা সদর, হাতিয়া, রামগতি ও কমলনগর।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকদের অনকূলে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া আছে। এছাড়াও আজ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে ১৬ হজার ৫০০ শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, বড় বিপদ থেকে বাংলাদেশ বেঁচে গেছে। সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি বাংলাদেশে আসার কোনো সুযোগ নেই, এটা নিশ্চিত। আমাদের একটি সতর্কসংকেত (৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত) দেয়া আছে, সেটি আমরা উপযুক্ত সময়ে তুলে নেব।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উপকূলীয় জেলা, উপজেলাসমূহে ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য আদান-প্রদানে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি (জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র) ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানে সার্বক্ষণিক কাজ করেছে।’ এনামুর রহমান আরও বলেন, ‘উপকুলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূটির (সিপিপি) ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আনসার ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। ঝড় আঘাত হানলে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত ছিল। মানবিক সহায়তার যথেষ্ট সংস্থান আগে থেকেই করা ছিল। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার জন্য যথেষ্ট মাস্ক এবং স্বাস্থ্য উপকরণ নিশ্চিত করা হয়েছিল।’
ঘূর্ণিঝড় হলেই বাঁধ ভেঙে যায়। এ বিষয়ে কী কোনো স্থায়ী সমাধান নেইÑ এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি অনেকগুলো জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে। সেগুলো পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। বাঁধগুলো অনেক পুরোনো। এ জন্য ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় টেকসই বাঁধ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটার জন্য ৩৭ বিলিয়ন ডলার বজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে সকল উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছু ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রস্তুত করা হয়েছে। আরেকটা সভা করে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন করা হবে। মাঠের কাজ শেষ হলে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেটা করব।’ সম্পাদনা : রেজা