৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট আসছে
সোহেল রহমান : সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট আসছে। প্রাক্কলিত এ বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। টাকার অঙ্কে বাজেটের আকার বাড়ছে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার তৃতীয় বাজেট।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা হবে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরে টাকার অঙ্কে জিডিপি’র মোট আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে বাজেটের আকার দাঁড়াচ্ছে জিডিপি’র ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
সূত্রমতে, আগামী বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট প্রাপ্তি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ শতাংশ) ধরা হয়েছিল। সে হিসাবে আসন্ন বাজেটে ঘাটতি বাড়ছে ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
ঘাটতি পূরণে আগামী বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৩ কোটি টাকা নেয়া হতে পারে। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৯৩ হাজার কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য উৎস থেকে ৫ হাজার ৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হতে পারে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার ৩ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বাজেট ঘাটতির অবশিষ্ট ৮৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে বৈদেশিক উৎস থেকে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা।
সূত্রমতে, বাজেট ঘাটতি পূরণে আগামী বাজেটে সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগামী অর্থবছরে প্রায় ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছে সরকার। এর বাইরে ঋণ হিসেবে আরও প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে। সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মত রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে।
এ প্রেক্ষিতে গত অর্থবছর ও চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের গতিধারা পর্যালোচনায় এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
অন্যান্যের মধ্যে আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)-এর আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৮৮ হাজার ২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এডিপি’র এই আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি’র তুলনায় ৯.৮৪ শতাংশ এবং সংশোধিত এডিপি’র তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপি’র আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং সংশোধিত এডিপি’র আকার হচ্ছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। সম্পাদনা : রেজা