ব্যবসায়ীদের ইচ্ছায় ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পরিণতি ভোগ করছে মানুষ
শাহিন হাওলাদার : কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ¦ালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেছেন, পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে ট্যারিফ কমিশমন সবসময় একটা মূল্যায়ন করে, তার ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনা করে এবং সেখানে একটি বেঞ্চমার্ক মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শুধু ব্যবসায়ীরাই থাকেন, ভোক্তাদের কোনো প্রতিনিধি থাকে না। ১৯৫২ সালের কমোডিটি অ্যাক্ট ২০১১ সালে রিভাইজ হলেও সেখানে ভোক্তাদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষার কোনো বিষয় নেই।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ সালে যেটা তৈরি হয়েছিলো, সেখানে ভোক্তাদের অধিকার আইন দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখে, আগের আইনের অধীনে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। শুধু ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেই নয়, সব ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীদের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থা বিদ্যমান থাকায় ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষিত নেই। আমাদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৯ টাকা বাড়বে কী বাড়বে না, অথবা এর ন্যায্যতা এবং যৌক্তিকতা আছে কী নেই সে ব্যাপারটিতে ভোক্তাদের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু ভোক্তাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তাছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হওয়ায় ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যেহেতু ভোক্তা অধিকার আইন আছে সেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য কোনো নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করা এখন জরুরি। অন্যথায় এ ধরনের অবস্থার কোনো প্রতিকার হবে না।
অনেকে মনে করেন, টিসবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা এবং তাদের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে স্বল্পমূল্যে, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে পণ্য দেওয়া। কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে ভোক্তাদের অধিকার বিপন্ন করা কোনো প্রতিকার হতে পারে না। সমস্ত আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে এবং সেখানে গণশুনানি ও বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্য হার পর্যালোচনা করতে হবে। যেহেতু বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে, কম্পিটিশন কমিশন অকার্যকরÑ এরকম পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে অবাধ কর্তৃত্ব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়া ভোক্তাদের অধিকার খর্ব করার শামিল।
ভোজ্য তেলের মূল্যে বৃদ্ধি একটি ঘটনা মাত্র। আলু, ডাল, চিনি সকল পণ্যের ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। দেশি-বিদেশি, আমদানি সকল ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সরকার কিংবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম হচ্ছে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতামূলক। প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থার জন্য ব্যবসায়ী কিংবা আমদানিকারকদের লাইসেন্স অবাধ করতে হবে। সম্পাদনা : রেজা