অনলাইনে চলছে আম বিক্রির ধুম
অর্থনীতি ডেস্ক : রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও আমের দোকানে মান ও জাতভেদে খুচরায় প্রতি কেজি আম ৭০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে এই দাম ৩৫ থেকে ৭০ টাকা।
দিন যত যাচ্ছে রাজধানীর বাজার, অলিগলি ও ফুটপাতের দোকান, ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা কিংবা ভ্যানে যেমন পসরা বাড়ছে, তেমনি মহামারীকালে অনলাইনেও বড় পরিসরে আম বিক্রি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
অসংখ্য ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে রাজধানী ও এলাকাভিত্তিক উদ্যোক্তারা বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি করছেন। দামও দোকানে বিক্রি করা আমের কাছাকাছি কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার ফলন ভালো, ক্রেতারাও সস্তায় পাবেন বলে মনে হচ্ছে। এখন পাইকারি দর ৩৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি হচ্ছে।
তিনি জানান, মে মাসের শুরুতে সাতক্ষীরার আম বাজারে আসতে শুরু করে। কারণ এই অঞ্চলের আম একটু আগেভাগেই পাকা শুরু হয়। গত ১০ দিন ধরে রাজশাহী অঞ্চলের আমও আসা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিক্রেতারা জানান, রোজার মাঝামাঝি থেকেই সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ কিছু এলাকার গুটিসহ কয়েকজাতের আম মিলছিল বাজারে। এর সঙ্গে এখন অন্য এলাকার আমে বাজার ভরপুর হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ থেকে গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর জাতের আম উঠতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন আম ব্যবসায়ীরা।
আমের এলাকা হিসেবে পরিচিত জেলাগুলোতে পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত আম পাড়া বন্ধ রাখতে বেঁধে দেওয়া সময়সীমার নির্দেশনা এবারও বহাল রেখেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। এই সিদ্ধান্ত মেনে রাজশাহীতে ১৫ মে থেকে গুটি আম, ২০ মে গোপালভোগ, ২৫ মে লক্ষ্মণভোগ এবং ২৮ মে থেকে হিমসাগর আম পাড়া শুরু করেছেন চাষিরা।
আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলিসহ অন্যান্য বেশ কয়েক জাতের আম বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর জুনের মাঝামঝিতে বাজারে আসবে হাড়িভাঙ্গা ও মোহনভোগ, জুনের শেষে মল্লিকা, জুলাইয়ে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ এবং অগাস্টে দুই-একটি জাতের আম পাড়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে গুটি আম কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নগরীর বায়তুল মোকাররম এলাকার ফল বিক্রেতা আতাউর রহমান জানান, তিনি বছরজুড়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি করেন। দেশি ফলের মৌসুমে অন্যান্য ফলের চেয়ে আম বেশি বিক্রি হয়। আম-লিচুর মৌসুম শুরু হয়েছে। আমরা গত প্রায় এক মাস ধরে ওয়াইজঘাট-বাদামতলীর পাইকারি বাজার থেকে এনে বিক্রি করছি। আমের সরবরাহ বাড়ার সাথে সাথে দামও কমে আসছে।
‘ম্যাংগো হাট বিডি’ নামে একটি ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে আম বিক্রি করছেন চার উদ্যোক্তা। ২০০৮ সাল থেকে তারা নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় মৌসুমের সময় অস্থায়ী শোরুমে আম বিক্রি করলেও এবার অনলাইনেও বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন।
তাদের একজন বুলবুল হোসেন বলেন, মানের দিক দিয়ে সবচেয়ে ভালো আম ক্রেতাদের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। সরাসরি চাষির কাছ থেকে কিনে যে আম পরিপক্ক কেবল সেগুলোই সরবরাহ করছি। তারা ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ পদ্ধতিতে বিক্রির জন্য অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছেন জানিয়ে বুলবুল বলেন, এখন শুধু ক্ষীরসাপাত জাতের আমের অর্ডার নিচ্ছি। ৩/৪ তারিখের দিকে (জুন) ডেলিভারি দেওয়া শুরু হবে। পরবর্তিতে অন্যান্য জাতের আমের অর্ডার নেওয়া হবে। পৌঁছানোর খরচসহ প্রতি কেজি আম ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
ফেইসবুক ও অনলাইনে ম্যাংগো বা আম নিয়ে সার্চ দিলে এখন অসংখ্য ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ পাওয়া যাবে যেগুলো গত শুধু এই বছর নয়, গত কয়েকবছর থেকেই আম বিক্রি করছে। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স কিংবা সুপারশপগুলোও অনলাইনে আমের অর্ডার নিচ্ছে। নিয়মিত এসএমএসও পাঠাচ্ছে অফার দিয়ে।
খুচরা বাজার থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে আম কেনার পর রামপুরা এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, গোলাপভোগ আম কিনেছি, দাম একটু বেশিই মনে হচ্ছে। হয়তো আর কদিন পর এ জাতের আম ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হবে।
তিনি বলেন, খবরে দেখি যেসব জেলায় আম উৎপাদন হয় সেখানে এবার ফলন ভালো হয়েছে, দামও হাতের নাগালের মধ্যে। সেই অনুযায়ী বাজারে আমের দাম আরও কম হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হচ্ছে না।
ফেসবুকে এভাবেই পেজ বা গ্রুপ খুলে আম সরবরাহ করছেন অনেকে। পরিচিতদের কাছে পাঠানোর মাধ্যমে শুরু এসব উদ্যোগ নিজেদের গ-ি পেরিয়ে সফলও হচ্ছে। ফেসবুকে এভাবেই পেজ বা গ্রুপ খুলে আম সরবরাহ করছেন অনেকে। পরিচিতদের কাছে পাঠানোর মাধ্যমে শুরু এসব উদ্যোগ নিজেদের গ-ি পেরিয়ে সফলও হচ্ছে।এদিকে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকায় আম পরিবহনের জন্য গত বৃহস্পতিবার ম্যাংগো স্পেশাল-১ ও ২ নামে পার্সেল ট্রেন চালু হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর-আমনুরা-রাজশাহী-ঢাকা-রহনপুর রুটে আমের মৌসুমে আগামী দেড় মাস পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনগুলো প্রতিদিন ওই রুটে চলাচল করবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আম পরিবহনের জন্য এই ট্রেন চালু হওয়াতে ওই এলাকার আম চাষিদের সুবিধা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সিরাজুল বলেন, আগে পরিবহন সমস্যার কারণে চাষিরা ফরিয়ার কাছে আম-লিচুসহ অন্যান্য ফল ও ফসল বিক্রি করে দিয়েছেন। এবার সরাসরি ঢাকায় আড়তদারের কাছে আম পাঠানোর মত ব্যবস্থা হয়েছে। যে কারণে চাষি পর্যায়ে দাম আগের চেয়ে একটু বেশি পাবে। একই কারণে ক্রেতারাও আরেকটু সস্তায় মৌসুমি ফল কিনতে পারবে বলেও জানান এই ফল ব্যবসায়ী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মত একইভাবে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও থেকে আরেকটি বিশেষ ট্রেন চালু করা হলে ওইসব এলাকার চাষিরাও ন্যায্য দাম পেতেন বলে মনে করেন তিনি। সূত্র : বিডিনিউজ, জাগোনিউজ। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা।