বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের বাজার দিশেহারা সাধারণ ত্রেতা
মাসুদ মিয়া : এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারিা তা-বে দেশের মানুষ যখন অস্থির হয়ে পরেছেন, তখন নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সাধারণ ক্রেতারা মনে করেন, গত একবছরের বেশি সময় করোনার কারণে আয় কমলেও বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। নতুন চাল আসতে না আসতে আবারও দাম বাড়তে শুরু করছে।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামই বাড়তি। আর এ সব পণ্য কিনতে রীতিমতো কোণঠাসা অবস্থায় ভোক্তারা। এতে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্বল্পআয়ের মানুষের। তাদের সীমিত আয়ে আকাশছোঁয়া দামে নিত্যপণ্য ক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে ঋণ করতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, করোনা শুরু পর থেকে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে যে প্রতিষ্ঠানে আছি এখানে নিয়মিত বেতন হচ্ছে না। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম ঠিকই বেড়ে চলছে। ফলে পরিবার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। সরকারের উচিত ভালোভাবে বাজার মনিটর করা।
স্বল্পআয়ের মানুষের খরচটা বেশিরভাগই হয় ভোগ্যপণ্য ক্রয় করে। গত কয়েক মাস ধরে চালের বাজারে অস্থিরতার কারণে তাদের ভোগান্তির অন্ত নেই।
জানা গেছে, বর্তমানে পুরাতন সরু চালের মধ্যে প্রতি ৫০ কেজি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়; ৪ মাস আগে ছিল ২ হাজার ৬শ টাকা। মাঝারি মানের চালের মধ্যে বিআর-২৮ জাত প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা; যা চার মাস আগে ছিল ২ হাজার টাকা। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা; যা ৪ মাস আগে ছিল ১ হাজার ৮শ হাজার টাকা। তবে নতুন মিনিকেট ৫০ কেজি বস্তা বিক্রিয় হচ্ছে ৩ হাজার টাকা বিআর-২৮ নতুন প্রতি ৫০ কেজি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা।
কোনও না কোনও অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুলছে। ভরা মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অভিযোগ রয়েছে, চালের বাজার অস্থির হওয়ার জন্য কিছু মিলার দায়ী। অসাধু ব্যক্তিরা বিপুল পরিমাণ ধান কিনে মজুদ করে। বস্তুত এভাবেই চালসহ অন্য নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়। যারা এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করতে বিলম্ব হলে বারবার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যাবে।
লক্ষ্য করা গেছে, দেশে একবার কোনও পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমতে চায় না। মহামারী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, তা প্রলম্বিত হবে। এ অবস্থায় ভোক্তারা যাতে বাজার তদারকির সুফল পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় অসাধুদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে ভোজ্য তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তেলের সঙ্গে চাল, পেঁয়াজের দামও বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দেড় থেকে দুই টাকা। পেঁয়াজের দামও চড়া।
রাজধানীর একাধিক এলাকায় ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা ভিন্ন ভিন্ন দরে ভোজ্য তেল বিক্রি করছেন। কেউ তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা শুনেই বাড়তি দামে তেল বিক্রি শুরু করেন। আবার কেউ এখনও আগের দামেই বিক্রি করছেন কারণ, তাদের কেনা কম দামে। ফলে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৪২ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর পাঁচভাই ঘাটলেন মুদি ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন জানান, প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১৪৪ টাকায় বিক্রি করছি। আমাদের আগের কেনা তাই আগের দামেই বিক্রি করছি। তবে দুই একদিন পরই লিটার ১৫০ টাকার বেশিতে বিক্রি করতে হবে। কারণ তেলের দাম অনেক বাড়তি। এখন খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ১৩৫ টাকা আর পাঁচ লিটার বোতল বিক্রি করছি ৬৭০ থেকে ৬৮০ টাকায়। নতুন দর অনুযায়ী এটাও ৭০০ টাকার বেশিতে বিক্রি করতে হবে।
চালের দামও এখন একটু চড়া জানিয়ে এই মুদি ব্যবসায়ী বলেন, ঈদের পর মিনিকেট চাল কেজিতে ৫ টাকা কমেছিল ৬২ টাকা বিক্রয় করছিলাম। এখন আবার বেড়ে পুরাতন ৬৫ টাকার মিনিকেট চাল বিক্রয় করছি নতুন মিনিকেট ৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। গতকাল থেকে দাম আবার বাড়তির দিকে। কেজিতে দেড়-দুই টাকা বেড়েছে। এছাড়া কাজল লতা চাল ৫২ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা, নাজির ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রয় করছি ৪৫ টাকা।
তবে আদা-রসুন আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। আদা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা আর দেশি রসুন ৬০ টাকা, আমদানি রসুন ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা ডালের কেজি ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা কেজি বিক্র হচ্ছে।
লক্ষিবাজারের সবজি বিক্রেতা কামাল বলেন, সবজির দাম বাড়া-কমার মধ্যেই থাকে। তবে এখনও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। কেজি প্রতি বেশিরভাগ সবজিই ৪০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি ঝিঙে ও চিচিঙ্গা ৪০, কচুর লতি ৪০, বরবটি ৬০ টাকা। কাকরোল ৬০ টাকা। বেগুন, ঢ্যাঁড়স ,পটোল, ৩০ থেকে ৪০ টাকা। টমেটো ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। গাজর ৪০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ ও চালকুমড়া আকার ভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
লেবু হালিপ্রতি আকার ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা। কাঁচামরিচ কেজি ৬০ টাকা। ধনিয়া পাতা ও পুদিনা পাতা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পুঁইশাক, লাউশাক, কলমি শাক, ডাটাশাক, লালশাক ও পাটশাক আঁটিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়।
কমলাপুর কাঁচা বাজারে সালাম নামে এক ক্রেতা বলেন, দাম বাড়ার খবর শুনলে বিক্রেতারা উৎসাহ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন। কমলে নানা গড়িমসি শুরু করেন। তেলের দাম বাড়ানোর খবর শুনেই দাম বেড়ে গেছে। দেড়শ টাকার বেশি দামে সয়াবিন তেল কিনতে হবে চিন্তাও করিনি। এভাবে সব পণ্যের দামই বেড়ে একের পর এক রেকর্ড করছে। আমরাও বাধ্য হয়ে কিনছি। আমাদের কি কিছু করার আছে? সরকার ব্যবসায়ীদের পক্ষে। তারা যা বলবে তাই হবে। আমাদের কথার কোনও মূল্য নেই।
এদিকে আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ। প্রতি কেজি রুই, কাতলা ২৫০-৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০-১৬০, আইড় ৪০০-৫০০ টাকা, মেনি মাছ ৩০০-৩৫০, বেলে মাছ প্রকার ভেদে ৩০০-৫০০ টাকা, বাইন মাছ ৩০০-৪০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, পুঁটি ২৮০-৩০০ টাকা, পোয়া ৩০০-৪০০ টাকা, মলা ২৮০-৩৬০ টাকা, পাবদা ২৫০-৩৫০ টাকা, বোয়াল ৪০০-৫০০ টাকা, শিং ও দেশি মাগুর ৪০০-৫০০, শোল মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, টাকি মাছ ৩০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৪০-১৬০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা