কালো টাকার উৎস সম্পর্কে অন্য সংস্থা প্রশ্ন করতে না পারার বিধান বাতিল হতে পারে
বিশ^জিৎ দত্ত : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে কিছু পরিবর্তন করা হতে পারে। টাকার উৎস্য সম্পর্কে অন্যকোন তদন্তকারী সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে নাÑ এ বিষয়টি বাতিল হতে পারে। চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ করারোপে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এর বাইরেও আয়কর আইনে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন করা হচ্ছে। কর্পোরেট কর বিশেষ করে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহার ২ শতাংশ কমতে পারে। কর অবকাশের আওতা বাড়ানো হতে পারে। বিশেষ করে দেশিয় কিচেন সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫ বছরের জন্য কর অবকাশ দেয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি ঘাটতি ধরে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। যার আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর চলতি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে কর রেয়াতের বিনিয়োগ সীমা কমতে পারে। বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা না দিলে গাড়ির ফিটনেস নবায়ন, নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সেবা নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবার ফলমূল ও সবজি আমদানির ওপর অগ্রিম কর আরোপ হতে পারে। অন্যদিকে ভ্যাট রিটার্নের পাশাপাশি আর্থিক বিবরণী জমা দেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। দেশে প্রায় ৬২ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এরমধ্যে ১৫ লাখ টিনধারী রিটার্ন দেন। আগামীতে যাতে সব টিনধারীই রিটার্ন দেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বাজেটে থাকবে। গাড়ির ফিটনেস নবায়ন ও নিবন্ধন নেওয়ার পাশাপাশি ঠিকাদারির দরপত্রে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আগে শুধু টিআইএন সনদ লাগত। আগামী বাজেটে এসব সরকারি সেবা নিতে রিটার্ন জমার রসিদও বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
একজন করদাতা তার আয়ের একটি অংশ সরকারনির্ধারিত কিছু খাতে (যেমন সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার, প্রভিডেন্ড ফান্ড, এফডিআর ইত্যাদি) বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পান। সে অনুযায়ী এখন একজন করদাতা তার আয়ের ২৫ শতাংশ বা সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। আগামী বাজেটে এই বিনিয়োগসীমা কমিয়ে ১ কোটি টাকা করা হতে পারে। বর্তমানে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের হার ১৫ শতাংশ এবং ১৫ লাখ টাকার বেশি আয় হলে এই হার ১০ শতাংশ।
ধনীদের সারচার্জের স্তর পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। একটি স্তর কমানো হচ্ছে। সারচার্জের নতুন স্তর এরকম হতে পারে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত কোনো সারচার্জ দিতে হবে না; তিন কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ; ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ; ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ; ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ হলে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ দিতে হবে। বর্তমানে ২০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ হলে ৩০ শতাংশ আয়করের ওপর ৩০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়।
বড় মৎস্যচাষিদের জন্য আগামী বাজেট দুঃসংবাদ বয়ে আনতে পারে। বর্তমানে এই খাত থেকে ২০ লাখ টাকার বেশি আয় হলে ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়। নতুন বাজেটে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় হয়, এমন মৎস্যচাষিরা ১০ শতাংশ করের সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু বছরে ৩০ লাখ টাকার বেশি আয় হলেই ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হবে। অবশ্য এই খাতে প্রথম ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর কোনো কর দিতে হবে না। ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়েও আগের মতো ৫ শতাংশ কর বসবে।
বিদেশি ফল ও সবজি আমদানির খরচ বাড়তে পারে। দেশে এখন ব্রকলি, অ্যাসপারাগাস, চেরি, টমেটো, রঙিন ক্যাপসিকাম, সেরেলিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিনব বিদেশি সবজির আমদানি হয়। এই সবজি এখন রাজধানীসহ বিভিন্ন সুপারশপে অহরহ মেলে। এ ধরনের সবজি আমদানির ওপর এখন কোনো অগ্রিম কর নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে এই ধরনের সবজির আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম আয়কর বসানো হতে পারে।
বাজারে এখন নানা ধরনের বিদেশি রসাল ফল পাওয়া যায়। সুপারশপের পাশাপাশি বড় পাইকারি বাজারে বিদেশি আপেল, নাশপাতি, কমলা, মালটার পাশাপাশি নানা জাতের তরমুজ, হাম্মাম, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরিসহ বাহারি ফল পাওয়া যায়। এসব বৈচিত্রময় ফল আমদানিতে এতদিন কোনো অগ্রিম কর বসানো হতো না। আগামী বাজেটে ৫ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম কর বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। প্রতি মাসে শুধু ভ্যাট রিটার্ন দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। বর্তমানে আর্থিক বিবরণীর বাধ্যবাধকতা নেই। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হতে পারে। এক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন ছয় মাসের মধ্যে ভ্যাট কার্যালয়ে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।