পতেঙ্গা থেকে সীতাকু-ের বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত বর্ধিত হবে আউটার রিং রোড
শহিদুল ইসলাম : পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত সাগর পাড়ের প্রায় ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাম চার লেনের আউটার রিং রোডের প্রধান অংশের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। তবে প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) আউটার রিং রোড নিয়ে নিজেদের পরিধির শেষ সীমায় যেতে চায়। তারা পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি এবার সীতাকু-ের বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত বর্ধিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আর এর মাধ্যমে সিডিএর আওতাধীন এলাকার শেষ প্রাপ্ত পর্যয় উন্নয়ন প্রকল্প পৌঁছে যাবে।
কিন্তু নগরীর অভ্যন্তর থেকে এই আউটার রিং রোডে যুক্ত হওয়ার তেমন কোনও সুযোগ নেই। একপ্রান্তে পতেঙ্গা এবং অপরপ্রান্তে ফৌজদারহাট যুক্ত হওয়ার ভাল মাধ্যম। তবে হালিশহর আনন্দবাজার চৌচালার অপ্রচলিত রাস্তা দিয়ে অনেক যানবাহন চলাচল করলেও দুর্ভোগ অনেক। রিং রোডের কার্যকারিতা বাড়াতে এই প্রকল্পের সঙ্গে দুটো ফিডার রোডও অনুমোদন হয়েছিল। সেসব ফিডার রোড়ের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
আউটার রিং রোড বর্ধিত প্রসঙ্গে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, মিরসরাইয়ে হচ্ছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। মূলত চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলের যোগাযোগের জন্য পৃথক রোড নেটওর্য়াকে আওতায় সাগরপারে নির্মিত হচ্ছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ কাম সড়ক। তাই আউটার রিং রোডকে কার্যকর করতে হলে তা মিরসরাই পর্যন্ত বর্ধিত করা ছাড়া উপায় নেই। অন্যথায় টানেল চালু হলে এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বে টার্মিনাল চালু হলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সাগর পাড়ের এ রোডের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, সাগর পাড় দিয়ে এই রোড মিরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত যুক্ত হবে। এতে ইকোনমিক জোন থেকে সহজেই পণ্যবাহী গাড়িগুলো বন্দরমুখী যাতায়াত করতে পারবে। আমাদের সিডিএ’র সীমা রয়েছে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত। সাগরিকা থেকে তা বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত বর্ধিত করবো। সাগর পাড়ের এই রোডের সঙ্গে ডিটি রোডের সাথে কয়েকটি স্থানে কানেকটিভিটি করা হবে। আর তা করা হলে সহজেই বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ট্রাফিক ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।
এদিকে কিন্তু সাগর পাড়ে বর্তমানে মিরসরাই ইকোনমিক জোন অংশে ৩০ ফুট চওড়া সুপার ডাইক নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফেনী নদীর মোহনা থেকে মিরসরাই-সীতাকু- বর্ডার পর্যন্ত ২২.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সুপার ডাইক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে মিরসরাই ইকোনমিক জোন অংশের তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রোডের কাজ শেষ হয়েছে।
এ প্রকল্পের বর্ধিতাংশ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শীবেন্দু খাস্তগীর বলেন, সাগর পাড়ে রোড নির্মাণের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তাই প্রকল্প নিলে আমরাই নিবো। সিডিএ পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত যে আউটার রিং রোড নির্মাণ করেছে সেই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। এই সড়কটি আমরা টেকনাফ পর্যন্ত বর্ধিত করবো।
ফিডার রোডের অগ্রগতি দেখতে আউটার রিং রোডে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট প্রান্তে ফিডার রোড-৩ এর ৯০০ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। রিং রোড থেকে দেখা যায় ফ্লাইওভারের কাজ পুরোপুরি শেষ। কিন্তু হেঁটে সাগরিকার দিকে আসতে রেললাইনের (চট্টগ্রাম বন্দর ও ফৌজদারহাটের মধ্যে সংযোগকারী রেললাইন) উপরে দেখা যায় খালি। রেললাইনের উভয়দিকে ফ্লাইওভারের কাজ প্রায় শেষ থাকলেও মধ্যবর্তী অংশ খালি। এছাড়া স্টেডিয়ামের উপরের খালের অংশেও ফ্লাইওভারের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। এই ফ্লাইওভারটি গিয়ে নামবে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশে সাগরিকা রোডের সঙ্গে। এতে অলংকার মোড় থেকে গাড়িগুলো সহজে এই ফিডার রোড দিয়ে আউটার রিং দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
রেললাইন জটিলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, রেলওয়ে থেকে আমাদের প্রথমে বলা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ মিটার উঁচুতে গার্ডার বসাতে। কিন্তু এখন আবার বলা হলো ৮ মিটার উঁচুতে বসাতে। তাই নতুন করে আরও দুটি পিলার বসিয়ে উচ্চতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে।
ফিডার রোড তিন নম্বরে রেললাইনের উচ্চতা জটিলতা থাকলেও ফিডার রোড-১ আরও পিছিয়ে। পতেঙ্গা নারিকেল তলা দিয়ে খেজুরতলা পয়েন্টে এসে রিং রোডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ফিডার রোড-১।
সরেজমিনে দেখা যায়, রিং রোডের নিচ দিয়ে একটি রোড এবং রিং রোডের পাশ দিয়ে একটি রোড নির্মাণের কাজ চলছে। এ বিষয়ে পপ্রল্পের পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের টাকা ক্ষতিগ্রস্তরা যথাসময়ে পায়নি বলে কাজে ধীর গতি ছিল। তবে এখন দ্রুত কাজ শেষ করছি। নারিকেল তলা থেকে আসা ফৌজদারহাটমুখী গাড়িগুলো রিং রোডের নিচ দিয়ে এসে প্রধান সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এছাড়া পতেঙ্গামুখী গাড়িগুলো বাম দিকের একটি লেন দিয়ে রিং রোডের সঙ্গে যুক্ত হবে।
ফিডার রোডের কাজ কবে নাগাদ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফিডার রোড-১ ও ফিডা রোড-৩ এর কাজ শেষ করা যাবে। আর তা করা গেলে নগরীর অভ্যন্তর থেকে গাড়িগুলো সহজে আউটার রিংরোডে যাতায়াত করতে পারবে।
উল্লেখ্য, পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড নির্মাণ করছে সিডিএ। এই প্রকল্পের সঙ্গে তিনটি ফিডার রোড রয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো পতেঙ্গা খেজুরতলা অংশ দিয়ে, দ্বিতীয়টি বড়পোল এবং তৃতীয়টি সাগরিকা দিয়ে। টানেলের সঙ্গে যুক্ত এই রোড ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা