করহার কমানোর ফলে রাজস্ব আদায় বাড়বে : অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা বান্ধব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব বাজেট হওয়াতে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে। একইসঙ্গে বাজেটে করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।
শুক্রবার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটোত্তর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সচিবরা অংশ নেন।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বময় করোনাকালে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থান হারিয়েছে। অনেক মানুষের সম্পদ খরচ হয়ে গেছে। এমন একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে বাজেট উপস্থাপন করেছি। আসুন আমরা সবাই মিলে এই বাজেট বাস্তবায়ন করি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে কর ছাড় দেয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি, যদি আমরা করহার আস্তে আস্তে কমাই, তাহলে আমাদের আদায় বাড়বে। একই সঙ্গে আয়কর আইনটিকে সহজ করা হবে। আইনটি যদি সহজ করতে পারি, করদাতাদের যদি এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে রাজস্ব আদায় অনেক বাড়বে।
প্রসঙ্গ: কালো টাকা
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিভিন্ন খাতে (পুঁজিবাজার, জমি, ফ্ল্যাট, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি) অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে কোনো কিছুৃ উল্লেখ করা হয়নি। এতে করে বিভিন্ন খাতে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগের সুযোগ চলতি ৩০ জুন শেষ হয়ে যাচ্ছেÑ এমন ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলছেন যে, অপ্রর্শিত অর্থ এভাবে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় সৎ করদাতারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও আমাকে বলেছেন। এমতাবস্থায়, বিভিন্ন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হবে কি না কিংবা এর সময়সীমা আরও বাড়ানো হবে কি নাÑ সেটি জানতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় বিভিন্ন মহল বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করেন। আর শুধু অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া নয়, বলা হয়েছে যে, এনবিআর অর্থের উৎস জানতে চাইবে না। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) অন্য কোনো সরকারি সংস্থাও জানতে চাইবে না।
এবার বাজেট পেশের আগে বিভিন্ন প্রাক্-বাজেট আলোচনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরাও বলেছেন যে, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলে সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়। তারা এমন সুযোগ দেখতে চান না।
প্রসঙ্গ: স্বাস্থ্য খাত
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া ‘মহামারীকালে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে’ ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে করোনার টিকা ক্রয়ে অর্থের সঙ্কট হবে কি নাÑ এমন আশঙ্কার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ যাই থাক, প্রয়োজনে অর্থের যোগান দিতে কোনো সমস্যা হবে না।
এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এক বছরে সরকার যত মানুষকে টিকা দিতে পারবে, তার চেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ আছে। সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও নেয়া যাবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।