আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ১
বাজেটে চাল, তেলে শুল্ক ও ভ্যাট কমেনি, বাজারে দাম বাড়ছে
বিশ্বজিৎ দত্ত : ২০২১-২২ সালের বাজেট প্রস্তাবে আমদানি করা বিভিন্ন নিত্যপণ্যের উপর ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আগের মতই রাখা হয়েছে। সুতরাং প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের স্বস্তির চেয়ে অস্বস্তিই বেশি হচ্ছে। বাজারে চাল, ডাল, চিনি ও তেলের দাম বাড়ছে ক্রমাগত। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে চালের মূল্য কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। ভোজ্য তেল ১৫০ টাকা লিটার, মশুর ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। চিনিও বাড়তির দিকে রয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন ধরনের মশলা আমদানিতে সম্পূরক গড়ে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর প্রভাবে সামনে মশলার দামও আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ^জিৎ দাস জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। এখন প্রতি টন সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪২০ ডলারে। দেশে এখনো আমরা আগের আমদানি করা ভোজ্য তেল ১২৮০ ডলারে বিক্রি করছি। এই স্টক ফুরিয়ে গেলে ভোজ্য তেলের দাম আবারও বাড়বে। বাজেটের আগে আমরা বলেছিলাম, আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ ও ১৫ শতাংশ যে ভ্যাট ও ৫ শতাংশ শুল্ক তা প্রত্যাহার করার। কিন্তু বাজেটে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। বরং সরিষার তেলে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চিনিতেও শুল্ক কমানো হয়নি। সুতরাং বাজারে স্বাভাবিকভাবেই এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী হাজী গোলাম মৌলা বলেন, আমদানি করা মশলায় সম্পুরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু জিরা থেকে শুরু করে গরম মশলা এসবের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, এখনো কিছু পণ্যে মুল্য স্থিতিশীল। আগামীতে বিশেষ কওে কোরবানি ঈদে অনেক জিনিসেরই দাম বেড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। দেশে এখন ৭ থেকে ৮টি বড় কোম্পানি নিত্যপণ্যের ব্যবসা করে। এরা হলোÑ সিটি গ্রুপ, মেঘনা, এসআলম, বসুন্ধরা, ফ্রেসসহ ও আরো কয়েকটি। তাদের ইচ্ছে মতো বাজারে সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। এরাই বাজেটে প্রস্তাবনা দেয়। এখানে পাইকারদের কিছু করার নেই। তবে এটা আমরা বুঝি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে।
বাজেটের আগে থেকেই বাজারে চালের দাম বাড়ছিল। বাজেটের পর চালের মূল্য কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে গেছে। বাজটের পর চিকন চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকায়। আগে এটি ছিল ২৮০০ টাকা। ২০১৭-১৮ সালে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট তুলে দিয়েছিল। এই সময় বাজারে চালের মূল্য কম ছিল। এবার চালের বাজার চড়া থাকার পরেও চাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়নি।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক এনবিআর সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে গরীবদের জন্য যে খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ করা হয়েছে তা মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। আর্থিক সহায়তার পরিমাণ শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ। সুতরাং এই বাজেটকে গরীবের উপকারী বাজেট বলা যায় না। বাজেটে নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত।
করোনায় যারা নতুন গরীব হয়েছে, তাদের বিষয়ে কিছুই তেমন করা হয়নি। সরকার মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দিচ্ছে তাও সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। যারা বাজারে যায় তারা সরকারের হিসাবের সঙ্গে নিজেদের বাজেট মিলাতে পারবে না। সরকার বলছে ব্যবসায়ীদের জন্য বাজেট দিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেলে ব্যবসায়ীরা কোথায় বিনিয়োগ করবে। বাজেট কর ও শুল্কের যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে এসব কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা আসলে আমদানি করবে। কিন্তু বিনিয়োগ করবে না। ব্যাংকে টাকা রেখে বসে থাকবে।