ডিএসইর লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকার উপরে ব্যাংক ও বীমা খাতের কল্যাণে শেয়ারবাজার সূচকের বড় উত্থান
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার দুই কার্যদিবস সূচক নিম্নমুখী থাকার পর গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার সূচকের বড় ধরনের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিনও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে ২ হাজার কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে। ব্যাংক ও বীমা খাতের কল্যাণে শেয়ারবাজারে সূচকের বড় উত্থানে হয়েছে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের আগে শেয়ারবাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে প্রস্তাবিত বাজেটের পর বাজারে কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়। এটা ছিল স্বাভাবিক। এখন মূল্য সংশোধনের পর বাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তারা বলছেন, ২০১০ সালের ধসের পর বাজার এখন সব থেকে ভালো অবস্থায় রয়েছে। তবে বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে এটা ভালো না। আবার টানা দরপতন হবে তাও কাম্য না। উত্থান-পতনের মাধ্যমে বাজার এগিয়ে যাবে এটাই ভালো বাজারের লক্ষণ।
তারা আরও বলছেন, সব থেকে বড় বিষয় লেনদেনের গতিপ্রকৃতি। হঠাৎ যদি লেনদেন বড় অঙ্কে কমে যায়, তা বাজারের জন্য ভালো না। দুদিন বাজার নিম্নমুখী থাকলেও লেনদেন হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে। লেনদেনের গতি কমেনি। এটা বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ।
গতকাল শুরুতে সূচকের উর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। ব্যাংক-বীমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে মাত্র ১৫ মিনিটে সূচক বাড়ে ৩০ পয়েন্ট। এরপর শুরু হয় আগের দিনের মতই শেয়ার বীক্রির চাপ।
ব্যাংক, ওষুধ ও রাসায়ন এবং বস্ত্র খাতের শেয়ারের দাম কমেছে। আর তাতে শুরু হয় সূচকের উঠানামা, যা অব্যাহত ছিল বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এরপর প্রায় শতভাগ বীমা কোম্পানির শেয়ারে দাম বাড়ায় সূচকে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। লেনদেনের শেষ ঘণ্টায় বীমা কোম্পানির পাশাপাশি ব্যাংকও প্রকৌশল খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে। এদিন বীমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৯টির, কমেছে একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। অর্থাৎ ৯৮ শতাংশ বীমার খাতের শেয়ারের দাম বাড়ে। ব্যাংক খাতের ৩১ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ২০ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪টির দর কমেছে ৭টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে মূল চমক অপেক্ষা করছিল শেষদিকে। শেষ ঘণ্টার লেনদেন পতনের কবল থেকে বেরিয়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়তে থাকে। ফলে পতন থেকে বেরিয়ে সূচক হয়ে উঠে ঊর্ধ্বমুখী এবং শেষ পর্যন্ত বড় উত্থানের মাধ্যমে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ২৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ১৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক এক পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিনভর ডিএসইতে ৩৬৯ কোম্পানিও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেনে অংশ এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৮১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৫টির। আর ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৬৫ কোটি ৭৫ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় দুই হাজার ৮৩ কোটি ২৮ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এদিকে টাকার অঙ্কের ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৫৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফিড, এনআরবিসি ব্যাংক, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স ও কাট্টলী টেক্সটাইল।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৭০ পয়েন্টে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১৬১টির, কমেছে ১১০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির শেয়ারের দাম। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯০ কোটি ৬৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। সম্পাদনা : রেজা