দেশে বছরে সাপের কামড়ে মারা যায় ছয় হাজার মানুষ
অর্থনীতি ডেস্ক : দেশে প্রতিবছর অন্তত ছয় লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। এতে প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা যায়।
দেশে প্রতিবছর আনুমানিক ছয় লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। আর সাপের কামড়ে মারা যায় ছয় হাজার মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ সাপের কামড়। আর বিষধর সাপ কামড়ানোর পর বেঁচে যাওয়া অনেকে বিভিন্ন ধরনের পঙ্গুত্ববরণ ও মানসিক সমস্যায় ভোগে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে বাংলাদেশে সাধারণত পাঁচ ধরনের বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এগুলো হলোÑ গোখরা, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, সবুজ ও সামুদ্রিক সাপ। ‘সর্প দংশনের চিকিৎসা নীতিমালা ২০১৯’ অনুযায়ী অ্যান্টি স্নেকভেনম আনুষঙ্গিক চিকিৎসা, কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
বর্ষাকালে সাপের কামড়ের সংখ্যা বেড়ে যায়। প্রকৃতিতে বর্ষাকাল আসতে এখনও এক সপ্তাহ বাকি। আগামী ১৬ জুন বাংলা মাস হিসেবে পহেলা আষাঢ়। অথচ এখনই হাসপাতালগুলোতে সাপের কামড়ের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে মৃত্যুও।
গত ৬ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সাপের কামড়ে জিল্লুর রহমান (৪৫) নামে এক সাপুড়ের মৃত্যু হয়েছে। সেদিন উপজেলার খাশপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তালম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্বাস উজ জামান জানিয়েছেন, মৃত জিল্লুর এলাকায় সাপে-কাটা রোগীদের চিকিৎসা করতেন এবং বিভিন্ন সময় সাপ ধরতেন। বিষাক্ত সাপের কামড়েই তার মৃত্যু হয়।
গত ২১ এপ্রিল সাপের কামড়ে মারা যায় ১১ বছরের সায়েম। বাড়ির পাশের পুকুরের চারিদিকে ছিল ছোট ছোট গর্তে পাখির বাসা। এমনি একটি বাসা থেকে পাখির ছানা আনতে গর্তে হাত দেয় সায়েম। আর গর্তের ভেতরে থাকা সাপ কামড় দেয় সায়েমকে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের বারোঘরিয়া গ্রামে। গত ৩ জুন নাটোরের লালপুর উপজেলায় ১৮ বছরের বিপ্লব হোসেনের মৃত্যু হয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে বিপ্লব হোসেন নিজ বাড়ির সামনে হাঁটাহাঁটি করছিলেন, এ সময় বিষধর একটি সাপ তাকে কামড় দেয়। প্রাথমিকভাবে বাড়িতেই তার বিষ নামানোর চেষ্টা করা হয়। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমানে সাপের কামড়ের বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক চিকিৎসা থাকলেও এখনও সাপের কামড় সম্পর্কে মানুষের মধ্যে অবৈজ্ঞানিক ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। এ নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার চর্চা এখনও ব্যাপকভাবে শুরু হয়নি। অথচ, যদি সঠিক সময়ে এসব রোগীকে অ্যান্টিভেনম না দেওয়া হয় তাহলে অনেক রোগী মারা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বাংলাদেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য উপজেলা কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনমের চাহিদা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং ইতিমধ্যে দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভ্যানম পাঠানো হয়েছে। আর যদি কোনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা সদর হাসপাতাল অ্যান্টিভেনম না পেয়ে থাকেন তাহলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ বিভাগে যোগাযোগ করার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিভেনম রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, যেসব অঞ্চলে সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয় সেসব অঞ্চলে যদি সাপে কাটার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগতিতে অ্যান্টিভেনম দেওয়া যায় তাহলে অবশ্যই সাপের কামড়ে মৃত্যু কমানো সম্ভব।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় এক ব্যক্তিকে অতি দ্রুত অ্যান্টিভেনম দেওয়ার হলে তিনি সুস্থ হন। অথচ তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল অত্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায়। শরীয়তপুরের নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম দিয়ে একজনকে সুস্থ করা গেছে। সম্প্রতি রংপুরে ২০ বছরের এক কিশোর সাপের কামড়ে আহত হয়। কিন্তু তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পরিবর্তে তিনজন ওঝার কাছে নিয়ে সময়ক্ষেপণ করেছে পরিবার। পরে তিনি হাসপাতালে আসার পথে রাস্তায় মারা যান। উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার ৯ জুলাই ২০২০ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ‘ওরিয়েন্টেশন অন স্নেক বাইট ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক এক অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এ তথ্য জানানো হয়। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন, গণকন্ঠ অনলাইন।