আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
রিজার্ভের টাকায় প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়ন পায়রার রাবনাবাদ চ্যানেলের ড্রেজিংয়ে জেডিএন’র সঙ্গে চুক্তি সই
সোহেল রহমান : দেশের রিজার্ভের টাকায় প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি সই করা হয়েছে। রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে বেলজিয়াম ভিত্তিক কোম্পানি ‘জান ডে নুল’ (জেডিএন)-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে ‘পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ’। চুক্তিতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ-এর চেয়ারম্যান কমোডোর হুমায়ুন কল্লোল এবং জেডিএন-এর বাংলাদেশ শাখার প্রকল্প পরিচালক জেন মইন্স সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা।
প্রকল্পটি প্রথমে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ (পিপিপি)-এর আওতায় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সে মোতাবেক পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেডিএন-এর উদ্যোগে ‘পায়রা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেড’ গঠন করা হয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি জেডিএন-এর সঙ্গে পিপিপি চুক্তি সই করা হয়। ওই চুক্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০২ কোটি ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা।
পরবর্তীতে বেসরকারি অংশীদারের ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে অর্থায়নের পরিবর্তে নিজস্ব অর্থায়নে ড্রেজিং কাজ সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে ধারাবাহিকতায় পিপিপি পার্টনারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন করে সমঝোতা ও চুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রকল্পটি সরকার দেশের বৈদেশিক রিজার্ভের অর্থ থেকে ঋণ নিয়ে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ থেকে প্রকল্পটির অর্থায়ন করা হচ্ছে। বর্তমান প্রকল্পটি এ তহবিলের প্রথম প্রকল্প। প্রকল্পের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এজন্য গত ১৫ মার্চ সোনালী ব্যাংক, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে একটি ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি সই করা হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পিপিপি’র পরিবর্তে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে প্রায় ৫৩ শতাংশ ব্যয় সাশ্রয় হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ৩৪ মাস। ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট বন্দরটিতে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করেছে যা থেকে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।
পায়রা বন্দরটি আন্দারমানিক নদীর তীরে রাবনাবাদ চ্যানেলে অবস্থিত। নিরবচ্ছিন্নভাবে জাহাজ চলাচলের জন্য বর্তমানে চ্যানেলে মেইন্টেন্যান্স ড্রেজিং চালু রয়েছে। বর্তমানে এ চ্যানেলের গভীরতা হচ্ছে ৬ দশমিক ৩ মিটার। ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত করা হলে ৪০ হাজার টন কার্গোবাহী এবং ৩ হাজার টিইইউ বিশিষ্ট জাহাজ বন্দরে সরাসরি ভিড়তে সক্ষম হবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহম্মদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সচিব তোফাজ্জ্বল হোসেন ভুইয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নৌ-পরিবহন সচিব মো. মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই। যেটার অভাব মাঝে মাঝে হয় সেটি হচ্ছে সততা, দায়বদ্ধতা ও জাতির প্রতি দায়িত্বশীলতার অভাব। আমাদের মাটির দিকে তাকাতে হবে। নিজেদের নদী-নালা, খাল বিল, পাহাড় সবই নিজেদের আয়ত্ত্বে আনতে হবে। বহিরাগত চিন্তার দরকার নেই। পশ্চিম নয়, আমাদের এখন পূর্ব দিকে তাকাতে হবে।
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রিজার্ভের অর্থে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এটি প্রধানমন্ত্রী যে পেশার স্বাধীনতা দিয়েছেন, তারই একটি উদাহরণ হচ্ছে আজকের চুক্তি। এই বন্দরটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, সুষম উন্নয়নে এই বন্দর বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কাজটি দ্রুত শেষ কাজ করতে হবে। দেশের সম্পদ কীভাবে কাজে লাগাতে হয় সেটি দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই পুরো প্রক্রিয়াটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সবাই মিলে কাজ করায় প্রকল্পের কাজ ঠিক থাকলেও ব্যয় অনেক কমেছে। এটি একটি উদাহরণ। সম্পাদনা : রেজা