আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
৫ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে দেশে সিরামিক পণ্যের বাজার ৬ হাজার কোটি টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : সিরামিক শিল্প বর্তমানে দেশে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খাতগুলোর অন্যতম একটি খাত। প্রতিনিয়ত বাড়হে থাকা এই শিল্পের বর্তমানে ৮৫ শতাংশ পণ্যই বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। দেশের এখন সিরামিক পণ্যের বাজার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার। টাইলসের বাজার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার। বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, উদীয়মান এই খাতটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬৮ সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই খাতে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে। পরোক্ষভাবে ৫ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে মহামারী করোনাকালে দেশে সিরামিক শিল্পের ব্যবসা স্বাভাবিক হলেও বিদেশের বাজারে ভালো অবস্থান গড়তে পারছে না। সিরামিক পণ্যের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিদেশের বাজারে প্রায় ১৫ কোটি ডলারের সিরামিক পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রায় ১৮ কোটি ডলারের সিরামিক পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
করোনার এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কিছু দাবি করেছে বিসিএমইএ।
দেশে উৎপাদিত সকল প্রকারের টাইলস ও স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে আরোপিত শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিসিএমইএ। সেইসঙ্গে দেশে এই শিল্পখাতকে রক্ষার জন্য বিদেশে তৈরি টাইলস আমদানি পর্যায়ে ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্য হ্রাস না করে আরও বাড়ানোর দাবি করা হয়।
বিসিএমইএ’র সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, করোনার প্রভাবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় রপ্তানি কমেছে। সারাবিশ্বের পরিস্থিতি তো জানেনই। মানুষ কাজ হারিয়েছে, ব্যবসায় মন্দা। মানুষ শৌখিন পণ্যের দিকে মনোযোগী কম হচ্ছে। তবে করোনার মাঝেও দেশের বাজারে ভালো অবস্থানে আছে সিরামিক পণ্যের ব্যবসা। এক সময় বিত্তবানদের ঘরে শোভা পেত সিরামিকের তৈরি থালা-বাসন। কালের পরিক্রমায় সেই সিরামিক পণ্য এখন সবার ঘরে ঘরে। ষাটের দশকে দেশীয় তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে এ খাতে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে সিরামিক পণ্য।
বিসিএমইএর তথ্য মতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রায় ৫৬৭ কোটি টাকার সিরামিক পণ্য বিদেশের বাজারে রপ্তানি করে বাংলাদেশ। তবে দেশে সিরামিকের বাজার আরও বিস্তৃত। বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে বিসিএমইএ সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, গত বছরের মার্চ-এপ্রিল-মে, এই তিন মাস আমরা কঠিন অবস্থার মধ্যে দিন পার করেছি। সেখান থেকে অবস্থা এখন ভালো। স্থানীয় চাহিদা বেড়েছে। লোকাল মার্কেটে আমাদের আইটেমগুলো ভালো চলছে। আমাদের ইন্টার্নাল অবস্থান ভালো। এ কারণে এক্সপোর্ট কম হলেও কোম্পানিগুলো টিকে আছে।
বিসিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে দেশে সিরামিকশিল্পের প্রায় কয়েকশ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যারা ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্তত ৫০ দেশে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি করে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল, রিসোর্টসহ বিনোদন কেন্দ্রে এখন বিদেশি সিরামিক সামগ্রীর পরিবর্তে দেশীয় সিরামিক সামগ্রীর ব্যবহার বেশি। দেশের বাজার বিবেচনা করে বিশ্ববিখ্যাত থাই ব্র্যান্ড কোটোর কারখানা স্থাপন করেছে দেশীয় কোম্পানি গ্রেটওয়াল সিরামিকস। সম্পাদনা : রেজা