চীনা অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে ৫ প্রকল্পে, বাড়ছে সময় ও ব্যয় বাজেটে ১৪ মেগা প্রকল্পের অর্থ বৃদ্ধি করা হয়েছে ২২ ভাগ
বিশ^জিৎ দত্ত : প্রস্তাবিত বাজেটে ১৪টি মেগাপ্রকল্পে আবারও অর্থ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১৪টি মেগাপ্রকল্পে উন্নয়ন খাতের ৫১৩২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা দেশের মোট উন্নয়ন খাতের ২২.৮ শতাংশ। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যায় ধরা হয়েছে ২২৫৩৩৪ কোটি টাকা। মেগাপ্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি করা হলেও কমেছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রল্পের ব্যয়।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, আগামী বাজেটের অন্যতম একটি বিষয় হলো কর্মসংস্থান। স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, যুবউন্নয়ন, সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আমাদের দেশের বাস্তবতায় অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। যেমন কলারোয়ার একটি বাঁধ মেরামতে ১ লাখ টাকা বরাদ্দে যে পরিমাণ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। সেখানে মেগাপ্রকল্পে ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগেও সেই পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না। কোভিড পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছিল মেগাপ্রকল্পের চেয়েও ছোট ছোট প্রকল্পগুলো বৃদ্ধি করা। যাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ে ও অধিকতর কর্মসংস্থান হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধান ৫টি খাতের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬.৩ শতাংশ। এরমধ্যে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎখাতে সবচেয়ে বেশি ৪০.৩ ভাগ উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যোগাযোগখাতে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে ২৯০টি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানিখাতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে ৮৩টি। গৃহায়ন ও সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়েছে ১৮৮টি, শিক্ষায় প্রকল্প নেয়া হয়েছে ১১৭টি, স্বাস্থ্যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে ৬৫টি। এবারে কৃষিতে কমে গেছে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ। গত বছর যেখানে মোট এডিপির ৪.১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষির বরাদ্দ কমিয়ে ৩.১ শতাংশ করা হয়েছে। কোভিড সচেতনতায় কোনো ধরনের প্রকল্প প্রস্তাবিত বাজেটে নেয়া হয়নি।
এবিষয়ে অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান জানান, বিগত কয়েক বছর যাবত বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। বেসরকারিখাতের শিল্পঋণ গত বছর ছিল ৮ শতাংশ। সরকারি বিনিয়োগই এখন কর্মসংস্থানের প্রধান ভরসা। কোভিডে বিপুল সংখ্যক লোক কর্মহীন হয়েছে। রেমিটেন্স বাড়লেও বিদেশি কর্মসংস্থান কমেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে যে কর্মসংস্থান হয় তার গতিবৃদ্ধি করাই ছিল বাজেটের অন্যতম একটি বিষয়। যেমন অতিমারীতে দেশের কৃষকরা একটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। তারা দেশে খাদ্য সংকট হতে দেয়নি। কিন্তু বাজেটে কৃষকদের উন্নয়নে বরাদ্দ কমেছে। মেগাপ্রল্পের মধ্যে যেমন রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে যেখানে শিল্প উৎপাদনই বন্ধ সেখানে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ দিয়ে এখন কি হবে কে জানে।
উল্লেখ্য, ১৪টি মেগাপ্রকল্পের ৮টি আগামী বছরের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু চীনের অর্থায়নে সম্পন্ন হবে এমন ৫টি প্রকল্পে গত ২ বছর যাবৎ চীন কোনো অর্থায়ন করছে না। ফলে প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ২০২২ সালে বাস্তবায়িত হবে এমন মেগাপ্রকল্পগুলো হলোÑ পদ্মা মাল্টিপারপাস ব্রিজ প্রকল্প ২০২১ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এটি ২০২২ সালে চলে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন। ২০০৯ সালে নেয়া এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ২০১৫ সালে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ঘোড়াশাল পলাশ সার কারখানা, রূপসা কম্বাইন্ড সার্কেল পাওয়ার প্ল্যান্ট, পায়রা পোর্ট, জয়দেবপুর টাঙ্গাইল ৪ লেন, মাতারবাড়ি কোল বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০২২ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।