ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি বৃদ্ধি পাবে
মাসুদ মিয়া : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস (পতনের সর্বনিম্ন সীমা) উঠিয়ে দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেন গতি বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এই সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এবিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। অন্তর্জাতিজ বাজারে ফ্লোর প্রাইস শেয়ারের নিয়ম নেই। এটা আরও আগে উঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। বিনিয়োগকারীরা ইচ্ছামতো শেয়ার লেনদেন করতে পারবেন। দরপতন ঠেকাতে বিশেষ মুহূর্তে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল। এখন সেই অবস্থা নেই। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ায় এখন বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে আসবেন।
এবিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত। এটা আরও আগে তুলে দেওয়া উচিত ছিল। মার্কেট সিস্টেমের বিরুদ্ধে ফ্লোর প্রাইস সিস্টেম। পৃথিবীতে কোনো দেশে এই সিস্টেম নেই। জোর জবরদস্তি করে মার্কেট ওঠানো কিংবা নামানো ঠিক না। তার ফল ভালো হয় না। পুঁজিবাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হয়। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে শেয়ারবাজারে লেনদেনেরও গতি বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সই নির্দেশনা জারির মাধ্যমে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে ১১০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল। এরপর চলতি বছরের ৭ এপ্রিলে প্রথম দফায় ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে গত ৩ জুন দ্বিতীয় দফায় আরও ৩০টি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হলেও নতুন করে নির্দেশনায় উত্থান-পতনের সার্কিট ব্রেকার আরোপ করেছে বিএসইসি। এতে বলা হয়, ২০০ টাকা পর্যন্ত কোনও কোম্পানির শেয়ারে দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে কিংবা কমতে পারবে।
২০০-৫০০ টাকা দামের শেয়ার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ দাম বাড়তে পারবে কিংবা কমতে পারবে। একইভাবে ৫০০-১০০০ টাকা দামের শেয়ার দিনে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা দামের শেয়ার ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা দামের শেয়ার দিনে ৫ শতাংশ এবং ৫০০০ হাজার টাকার বেশি দামি শেয়ার ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়তে কিংবা কমতে পারবে।
উল্লেখ্য, গতবছর দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলো শেয়ার বাজারে ভয়াবহ ধস নামে। শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে গত বছরের ১৯ মার্চ সে সময়ের কমিশন প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়।
করোনাভাইরাসের কারনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে সেটা ভয়াবহ রূপ ধারন করে গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্ত হওয়ার পরে। এরপরই বিনিয়োগকারীরা যার যার অবস্থান থেকে শুধু বিক্রি করার চেষ্টাই করে গেছেন। বাজারে দেখা দেয় ক্রেতার ভয়াবহ সংকট। তবে এখন করোনাভাইরাস নিয়ে সেই আতঙ্ক নেই। এছাড়া নতুন কমিশনের বেশ পদক্ষেপ বাড়তি আস্থা যুগিয়েছে। যাতে করে শেয়ারবাজার এগিয়ে যাচ্ছে।
দেখা গেছে, গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি ৪ হাজার ৭৬৮ পয়েন্টে ছিল। যেটা করোনা আতঙ্কে কমতে কমতে ৮ মার্চ এসে দাড়াঁয় ৪ হাজার ২৮৭ পয়েন্ট। আর ওইদিন দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরে ৯ মার্চ একদিনেই ২৭৯ পয়েন্ট কমে যায়। যা ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে ১ম রোগী মারা যাওয়ার দিন নেমে যায় ৩ হাজার ৬০৪ পয়েন্টে। আতঙ্কিত শেয়ারবাজারের এমন পতন ঠেকাতে ১৯ মার্চ চালু করা হয় ফ্লোর প্রাইস।