নওগাঁর আম্রপালি যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হলো
তুহিন রেজা : নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আম্রপালি (বারি আম-৩) জাতের আম ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হয়েছে। উপজেলার ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ এর মালিক সোহেল রানা তার নিজেস্ব বাগান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিদেশে আমগুলো রপ্তানি করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার ফ্লাইটে আম্রপালি আমের প্রথম চালান (প্রায় এক টন) ইংল্যান্ডের উদ্দেশে রওয়ানা করেছে।
তরুন উদ্যোক্তা সোহেল রানার সাপাহার গোডাউন পাড়ায় ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ এ প্রায় ১৪০ বিঘা জমিতে আড়াই বছর বয়সি প্রায় দেড় হাজার আম্রপালি গাছ রয়েছে। যেখান থেকে এ বছর প্রায় ৪০ টনের মতো আম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আম রপ্তানির পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। উত্তম কৃষি চর্চা পদ্ধতি বিশেষ করেÑ সুষম ও জৈব সার, নিয়মিত কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক এবং সারা বছরই পরিচর্চা করতে হয়। কারণ রোগবালাই মুক্ত আমই বিদেশে যায়। ১৫ দিন আগে গাছে সবধরনের স্প্রে বন্ধ করতে হয়।
সাধারণ চাষীরা কয়েকদিন আগে কীটনাশক স্প্রে করে বাজারে নিয়ে যায়। কিন্তু বিদেশে যেসব আম রপ্তানি করা হবে সেগুলো ঢাকাতে কোয়ারেন্টাইন হয়। আমের কোনো রোগবালাই বা কীটনাশক আছে কিনা।
সোহেল রানা বলেন, বুধবার হারভেস্ট করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্যাকেজিং করা হয়। এরপর রাতে পিকআপে ঢাকায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সারাদিন রপ্তানির যাবতীয় প্রস্তুতিশেষ করে সন্ধ্যায় ফ্লাইটে ঢাকা থেকে বিলেতে যাত্রা করেছে। আমের রাজধানী সাপাহারে সম্ভাবনার নতুন এক দ্বার উন্মোচিত হবে বলে তিনি মনে করছেন। সাপাহারের আম বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নিতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।
বারি’র উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে উৎপাদিত আম্রপালি আমের প্রথম চালান (প্রায় এক টন) ইংল্যান্ডের উদ্দেশে রওয়ানা করেছে। এ বছর প্রায় ১০ টন আম রপ্তানি করার ইচ্ছা আছে। এক্সপোর্টারের কাছে প্রায় চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।
তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড থেকেও আমরা ডাক পাচ্ছি। অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে। কিভাবে আম রপ্তানি করা যাবে জানতে চাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে দাম কম পেলেও বিদেশে ভাল দাম পাওয়া যাবে। এতে আমরা লাভবান হতে পারবো।
উল্লেখ, নওগাঁর পতœীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের রূপগ্রাম গ্রামের কৃষক আজিজার রহমানের ছেলে সোহেল রানা। তিনি নিম্নমধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের ছেলে। পরিসংখ্যান বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন।
কিছুদিন ঢাকায় চাকরি করার পর ছেড়ে দিয়ে ২০১৫ সালে নিজ গ্রামের খাড়িপাড়া এলাকায় পৈতৃক ১২ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার। নাম দেন ‘রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মেধা, পরিশ্রম আর অটুট নৈতিক মনোবলের কারণে তিনি এখন ১৪০ বিঘা জমিতে পৃথক দুটি সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন।