প্রবাসী আয়ে ভর করে রিজার্ভ সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়াল
নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসের মহামারীর মধ্যেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ে (রিজার্ভ) ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। ১৭ জুন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ রেকর্ড ৪৫ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন বা প্রায় ৪ হাজার ৫৪৬ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যা দেশিও মুদ্রায় রিজার্ভের পরিমাণ ৩ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সূত্র বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈধ পথে রেমিটেন্স নিয়ে আসাকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার নগদ ২ শতাংশ প্রণোদনার দিয়ে আসছে। এর পর থেকে রেমিটেন্স আসার গতি বেড়ে যায়। এটা করোনাকালে আরও গতি বেড়ে যায়, যা এখনও যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটেও বৈধ পথে প্রবাস আয় প্রেরণকে উৎসাহিত করতে আগামী অর্থবছরেও এ খাতে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে গত অর্থবছর থেকে এই নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
তবে বৈদেশি আয় বৃদ্ধি করার জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থমন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবিত বাজেটে রেমিটেন্সের জন্য প্রণোদনার বাড়ানোর প্রস্তাবি দিয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল এক চিঠির মাধ্যমে এই প্রস্তাব করা হয়। প্রবাসীদের উৎসাহী করতে বিদ্যমান ২ শতাংশের প্রণোদনা বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা যেতে পারে। এ খাতে সরকারের অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এটি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের ১৭ জুন পর্যন্ত রিজার্ভ ২৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বা ৯ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ ৩০ জুন যা ছিল ৩৬ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ- এই ৯ দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুদ বাংলাদেশের এই বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ১১ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ৩ মে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। একইদিনে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ৪৪.০২ বিলিয়ন। তারও আগে ৩০ ডিসেম্বর রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডিসেম্বর ৪২ মিলিয়ন ডলার এবং ২৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে দেশের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। দেশে এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরে ১১ মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এ বছর এটি ৩৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে এটি আরও ২০ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও