করোনার কারণে ভারতের ধাবাগুলো বন্ধের পথে
অর্থনীতি ডেস্ক : ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির সঙ্গে পাঞ্জাবের সংযোগকারী একটি মহাসড়কের পাশে নিজের খাবারের দোকানে শুয়ে আছেন অসিন শর্মা। মহাসড়কের ওই অংশে এ ধরনের পাঁচটি দোকান। এই রাস্তায় চলার সময় হঠাৎ দুয়েকটা গাড়ি হয়তো থামে। বেশ সতর্কভাবে উঁকি দিয়ে চা কিংবা পানি চায়। শর্মার দোকানের তন্দুর ঠা-াই পড়ে থাকে, এর ব্যবহার এখন বন্ধ।
৩৫ বছর বয়সী অসিন শর্মা বলেন, আমার অবস্থা খুবই খারাপ, ধাবা হয়ত বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের হাতে কাজ নেই, অথচ অনেক খরচ টানতে হচ্ছে। খুবই দুর্দশায় আছি। ভারতে এ ধরনের খাবারের দোকান স্থানীয়ভাবে ‘ধাবা’ নামে পরিচিত। রাস্তার পাশে এরকম ধাবার চল রয়েছে সবখানেই। বিশেষ করে হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কগুলোর পাশে নিয়মিত বিরতিতেই এ ধরনের ধাবা চোখে পড়বে। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারী শুরুর পর খদ্দেরের অভাবে চরম দুঃসময় পার করছে এসব ধাবার মালিক এবং কর্মীরা। বিভিন্ন রাজ্য সরকার চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করলেও স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কায় খুব বেশি মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। ফলে ধাবাগুলো বেশিরভাগ সময়ই খদ্দেরশূন্য থেকে যাচ্ছে।
অনেক ধাবা পারিবারিকভাবে পরিচালিত, লাখ লাখ মানুষ কাজ করে এসব খাবারের দোকানে। তাদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা যেমন আছে, অন্য রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকও কম নয়।
মহামারীর কারণে এরা সবাই পড়েছে অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে। ভারতের পুরো ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পই আসলে কঠিন সময়ে পড়েছে। ভারতের অর্থনীতির অধঃগতিও এই ভোগান্তির অন্যতম কারণ।
শুক্রবার ভারতে ৬২ হাজার ৪৮০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা গত ৯ মে-তে শনাক্ত হওয়া চার লাখের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম। তবে সংক্রমণের এই দ্বিতীয় ঢেউ কাটতে না কাটতেই ভারতে তৃতীয় ঢেউয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারত সরকার যদি আগামী বছরের মধ্যে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার বেশিরভাগকে টিকা দিয়ে ফেলার অসাধ্য সাধন করেও ফেলে, এই ধাবা ব্যবসায়ীরা মহামারীর ধকল কাটিয়ে উঠতে পারবে না। ভারতে মহামারীর মধ্যে সঙ্কটে পড়া হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গত বছর ব্যাংক ঋণে কেন্দ্রীয় সরকারের গ্যারান্টির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি মার্চের শেষ নাগাদ কিছু ব্যাংক ঋণ মওকুফও করা হয়েছে। তারপরেও কিছু রেস্তোরাঁ মালিক ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে নোটিস পেয়েছেন।
ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ রেস্তোরাঁগুলোকে সাহায্যের জন্য সরকার আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। তবে এ বিষয়ে আর কিছু জানাতে রাজি হননি মন্ত্রণায়লের মুখপাত্র।
রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছেন, আরও সরকারি সহায়তা না পেলে তাদের অনেকেই হয়ত ব্যবসা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। আর সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ যদি সত্যিই আসে, তাদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি শোধ করারও অনিশ্চয়তায় পড়বে। পাওনাদারদের পয়সা চুকাতে না পারলে সম্পত্তি বেচতে হবে। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁকেই কর্মীদের বেতন কমাতে এবং কর্মী ছাঁটাই করতে হবে।
মান্নাত হাভেলি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক সনু শর্মা বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তাদের রেস্তোরাঁয় এত ভিড় থাকত যে ব্যবসা সামলাতে তিনশ কর্মী লাগত। সেখানে এখন দিনে কাজ করেন ৫০ থেকে ৬০ জন।
চাকরি হারানো এসব শ্রমিকের অনেকে এখন নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়ে আরও কম মজুরিতে ক্ষেতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। রেস্তোরাঁ খাতে বিপুল কর্মী ছাঁটাই হওয়ায় ভারতে বেকারত্বও বাড়ছে।
মুম্বাই-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সিএমআইইয়ের তথ্যানুযায়ী, মার্চে যেখানে সেদেশে বেকারত্বের হার ছিল সাড়ে ৬ শতাংশ, তা মে মাসে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ১১ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। নয়া দিল্লি থেকে মুম্বাইয়ের মহাসড়কের পাশে হংস রেস্তোরাঁটির মূল ব্যবসা ছিল বিয়ে ও জন্মদিনের অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ ও পরিবেশন করা। এখন শুধু ‘টেকঅ্যাওয়ে’ হয়। এভাবেই তারা টিকে থাকার লড়াই করছে, কিন্তু খুব বেশি অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক কৈলাশ চান্দ মেঘওয়াল বলেন, এমন দিন দেখতে হবে তা কল্পনাও করিনি। আমাদের প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মী গ্রামে ফিরে গেছে। সূত্র : বিডিনিউজ, বার্তা২৪। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত