শোভন দত্ত : অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশও একটি কৃষি প্রধান দেশ। এটা সত্য যে স্থুল দেশজ উৎপাদন কৃষি খাতের অবদান ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। তবে আমাদের দেশের কৃষকের জন্মই যেন অন্যের জন্য।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষক মাঠে ফসল ফলান, অথচ উৎপাদিত ফসল ভোগ করতে পারেন না বলা চলে। এ নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো একটি জরিপ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
তাতে দেখা যায়, একজন কৃষক খাদ্য শস্য উৎপাদন করতে গিয়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করে তারমধ্যে ৬৫ টাকার সমপরিমাণ পণ্য বাজারজাত করেন। বাকি ৩৫ টাকার সমপরিমাণ পণ্য নিজে ভোগ করেন। ফলের মধ্যে ৮০ টাকার সমপরিমাণ পণ্য বিক্রি করে দেওয়া হয়। বাকি ২০ টাকার সমপরিমাণ নিজেদের জন্য রেখে দেন। এটাকে অন্যভাবে বললে ১০০ মণ খাদ্য শস্যের মধ্যে ৩৫ মণ ভোগ করেন, আর ৬৫ মণ বিক্রি করেন।
কৃষি পণ্যের স্থুল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত’ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার বিবিএস আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শশাঙ্ক শেখর ভৌমিক, মেসবাহুল আলম। সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম। জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ। ১৫০ ধরনের উৎপাদিত পণ্যের তথ্য বের করা হয়েছে জরিপে।
জরিপে উঠে এসেছে, এখনও কৃষিখাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং প্রায় ৪১ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে কৃষিখাতে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে দেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রকার ফল, শাকসবজি এবং অন্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে বেড়েছে।
সাধারণত উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সবটাই বাজারে বিক্রি করা হয় না। একজন কৃষক তার পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর অবশিষ্ট কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রি করে থাকেন। উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মধ্যে বাজারে বিক্রি হওয়া কৃষি পণ্যের প্রকৃত পরিমাণকে স্থুল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত বলা হয়ে থাকে। সাধারণত বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত অপর্যাপ্ত হলে ওই দেশ আমদানি করতে বাধ্য হয়। যা কোনো দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য কমিয়ে আনে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা আচার্য্য