ডেউয়া ফলের উপকারিতা
আবদুর রহমান
ডেউয়া একটি অপ্রচলিত পুষ্টিকর ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ (ক্যারোটিন), বি, সি, এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সুস্বাস্থ্যের জন্য এসব পুষ্টি উপাদানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডেউয়া ফলের ইংরেজি নাম Monkey Jack এবং বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus Iacucha. এটি মেরোসি (Moraceae) পরিবারভুক্ত একটি বৃহদাকার পত্রমোচক বৃক্ষ। ডেউয়া ফলের গড়ন গোলাকার হলেও অনেকটা এবড়ো থেবড়ো ও অসমতল। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে রঙ হলুদ হয়। ফলের খোসা খসখসে ও খুব পাতলা। পাকলে এ ফলটি অতি মোলায়েম হয়। পাকা ফল ভাঙলে ভেতরে কাঁঠালের মতো ছোট ছোট হলুদ রঙের কোষ দেখা যায়। এসব কোষের শাঁস নরম ও হলুদ এবং খেতে টক-মিষ্টি স্বাদের।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম ডেউয়া ফলে ০.৭ গ্রাম প্রোটিন, ১৩.৩ গ্রাম শর্করা, ১.১ গ্রাম স্নেহ, ০.০২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৫ মিলিগ্রাম লৌহ, ২৫৪ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৬৬ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি থাকে। ডেউয়া ফলে অধিক পরিমাণে ক্যারোটিন থাকে। এ ক্যারোটিন হতে আমাদের দেহে ভিটামিন ‘এ’ সৃষ্টি হয়। দেহের পুষ্টির জন্য ভিটামিন ‘এ’ বিশেষ প্রয়োজন। দেহের টিস্যুসমূহের বৃদ্ধি ও মেরামতে সহায়তা দান, উন্মেচিত টিস্যু রক্ষা, দেহের ভিতরের পিচ্ছিল ঝিল্লিসমূহকে জীবাণুর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা, শক্ত হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়তা, পাকস্থলীর হজমীরসের ক্ষরণ বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি ত্বক ও চোখ সুস্থ রাখা ভিটামিন ‘এ’ এর প্রধান কাজ। তাই এ ফলে থাকা ভিটামিন ‘এ’ (ক্যারোটিন) চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। শিশুদের অন্ধত্ব ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধে পাকা ডেউয়া এবং অন্যান্য গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের শাকসবজি ও ফলমূল অত্যন্ত উপকারী।
ডেউয়া ফল থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। ভিটামিন ‘সি’ আমাদের দাঁত, মাড়ি ও পেশি মজবুত করে। তাছাড়া ভিটামিন ‘সি’ নানা ধরনের ভাইরাস ইনফেকশন, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে। এটি দেহের ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্য করে। এই ভিটামিন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। তাছাড়া স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ডেউয়া ফল রান্না ছাড়া সরাসরি খাওয়া যায় বলে, এ ফলের সমুদয় ভিটামিন ‘সি’ আমাদের শরীরের কাজে লাগে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মতো ভিটামিন ’সি’ আমাদের শরীরে জমা থাকে না। প্র¯্রাব ও ঘামের সাথে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। কাজেই দেহের প্র্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘সি’ এর চাহিদা পূরণে ডেউয়া এবং অন্যান্য ভিটামিন ‘সি’, সমৃদ্ধ দেশীয় ফলমূল (যথা- আমলকি, পেয়ারা, আমড়া, কামরাঙা, কুল, লেবু ইত্যাদি) আমাদের প্রতিদিনই বেশি করে খাওয়া উচিত। এ ফলে আরো রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরে শক্তি যোগায়। হৃৎপিÐের সংকোচন, প্রসারণ ও স্পন্দনে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডেউয়া ফলে পটাশিয়াম থাকে। তাই এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
কাঁচা ডেউয়া কেটে ৮-১০ গ্রাম বেটে গরম পানিতে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ওই পানি সকালে খালি পেটে খেলে পেট পরিস্কার হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। যাদের অসুস্থতার কারণে মুখে রুচি নেই। তারা ২-৩ চামচ ডেউয়া ফলের রস ও সঙ্গে সামান্য লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে দুপুর বেলা ভাত খাওয়ার আগে এক সপ্তাহ খেতে পারেন। এতে মুখে রুচি ফিরে আসবে। আবার কোনো কারণে বমি বমি ভাব অনুভব হলে এফল খেলে দ্রæত সেরে যায়। যকৃতের নানা অসুখ নিরাময়েও সাহায্য করে ডেউয়া ফল।
অনিয়ন্ত্রিত ওজন এসময়ের বড় সমস্যা । অথচ এক থেকে দেড় চামচ ঠান্ডা পানিতে ডেউয়া ফলের রস মিশিয়ে রোজ একবার করে এক মাস পান করলে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অত্যধিক তৃষ্ণা নিবারনে কাজ করে টক জাতীয় এই ফল। ডেউয়া ফল খেলে স্মৃতিশক্তিও বাড়ে । কাজেই এ ফল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী ।
ডেউয়া ফল তাজা বা টাটকা অবস্থায় সরাসরি খাওয়া হয় বলে এতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান সমূহ অবিকৃত অবস্থায় আমাদের দেহ কর্তৃক গৃহীত হয়। তাই দেহের পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ-সবল ও নানাবিধ রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য মৌসুমের সময় দৈনিক বেশি করে পুষ্টি এবং ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ দেশীয় ফল ডেউয়া ও অন্যান্য ফলমূল আমাদের বেশি করে খাওয়া উচিত।
লেখক : উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিস, রূপসা, খুলনা।