শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ এখন মিরাকল ও ইমার্জিং টাইগার
আমিরুল ইসলাম : রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির বলেছেন, বাংলাদেশে স্বাধীন হওয়ার পরে প্রায় ৩০ বছর আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিলো খুবই সামান্য। ২০০৬ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিলো ৫০০ ডলারের নিচে। এখন সেটা ২ হাজার ডলারের ওপরে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, আগে আমরা অপেক্ষা করতাম কখন কনসোশিয়াম মিটিং হবে এবং সাহায্যদাতা দেশগুলোর কনসোর্টিয়াম মিটিংয়ের মাধ্যমে যা সাহায্য পাবো সেটার ওপর নির্ভর করে আমরা আমাদের বাজেট করবো। সম্প্রতি আমরা নিজেরাও অন্যদের সাহায্য দিচ্ছি। আমরা শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য দিয়েছি, আরও কয়েকটি দেশকে সাহায্য দিতে আমরা প্রস্তুত। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফুড প্রোডাকশনে আমরা বিশে^র মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছি। যে দেশটিকে স্বাধীনতার পরে আমেরিকা তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলো, এই দেশটিকেই এখন জাতিসংঘের মহাসচিব বলছেন, মিরাকল এবং ইমার্জিং টাইগার। এই কাজগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
ড. আহমদ আল কবির বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ১৯৯৬ প্রথমবার ক্ষমতায় এসে অনেক বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরও প্রথমে তাকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পানা ‘ভিশন ২০২১’, ‘ভিশন ২০৩০’ এবং ‘ভিশন ২০৪১’ সামনে নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে একটি উন্নয়ন বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫-৬ শতাংশের মধ্যে আমরা ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। এই জায়গা থেকে বের হয়ে স্ট্রং ফাউন্ডেশনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ৭-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা ভাবছি। কোভিড-১৯ এর আক্রমণ আমাদের অনেক বাধাগ্রস্ত করেছে। কিন্তু এশিয়ার মধ্যে আমাদের অবস্থান সবচেয়ে শক্তিশালী এই মুহূর্তে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের অর্থনীতির ফাউন্ডেশন অনেক শক্ত হওয়ায়।
এটা সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বলিষ্ট নেতৃত্বের কারণেই। এই ফাউন্ডেশন নিয়েই এখন আমাদের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়ে ৪০ বিলিয়নের কাছাকাছি। এক্সপোর্ট ১০ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে চলে গেছে। আমদানিও একই গতিতে এগিয়ে চলছে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা একটি শক্ত অবস্থানে এখন রয়েছে। করোনা মোকাবেলা করতে গিয়ে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো সাহসীভাবে মোকাবেলা করতে আমরা সক্ষম এবং করে যাচ্ছি। জাতির পিতা এই রাষ্ট্রটির স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিলো ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উপহার দেওয়া। ২০০৬ সালে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে ছিলো, এখন সেটা প্রায় ২২-২৩ শতাংশ। করোনা আমাদের কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এটা সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়বে। আমরা দেখতে পাচ্ছি এই কোভিডের সময় যুগান্তকারী কিছু কার্যক্রম। আশ্রয়হীন মানুষদের জন্য ঘর তৈরি করে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা গরিব মানুষদের উপহার দিচ্ছেন। আশ্রয়হীন মানুষরা ঘর পাচ্ছে, তাদের থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে।
আমরা একদিকে দেখছি পদ্মা সেতু, অন্যদিকে দেখছি পায়রা বন্দর। মিরেরসরাইয়ে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠছে এটা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে যাবে। এটা হয়তো সিঙ্গাপুরকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রায় ১০০ কোটির মতো স্পেশাল ইকোনোমিক জোন আমাদের আশার সঞ্চার করছে। দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার বিল্পব ঘটে গেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমরা আরও বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাবো। এই ধারাটা অক্ষুণœ রাখার জন্য সমগ্র দেশবাসি, আমাদের যুব সমাজ ও সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আপামর জনসাধারণ একসঙ্গে কাজ করবো। কিছু বিচ্ছিন্ন মানুষ থাকবে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল।
আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে ঐক্যবদ্ধভাবে, দলমত নির্বিশেষে আমরা সকলে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমরা একটা সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিলো এবং এই সোনার বাংলা হবে শোষণমুক্ত। এখানে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমে আসবে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আমরা বিশ্বের বুকে উন্নত দেশে হিসেবে বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারবো। এখন যেটা পারছি সেটা ২০ বছর আগে চিন্তাও করা যায়নি। আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ করছি, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের অগ্রযাত্রাকে আরও ট্রান্সপারেন্ট করবো। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সরকার এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি এই টুকুই বলবো যে, আমরা সকলে মিলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল স্তরের কর্মীই যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করে কাজ করে। দেশের মানুষ থেকে সরে আসলে আমাদের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। তাই আমাদের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করেই এই কাজটি করতে হবে যার নির্দেশনা দিচ্ছে শেখ হাসিনা। আমার বিশ্বাস আমরা এটাতে সফল হবো, এখানে কোনো শঙ্কা নেই, সকল প্রতিবন্ধকতাকে আমরা কাটিয়ে ওঠতে পারবো।