শুধুমাত্র কারখানা ম্যানেজাররা উচ্চ শিক্ষিত হলে দেশের উৎপাদন বাড়বে ১০ শতাংশ : বিশ্বব্যাংক
বিশ্বজিৎ দত্ত : বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ৫০ শতাংশ মালিক ও ম্যানেজারের কোন ডিগ্রি নেই। তারা যদি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন তবে দেশের উৎপাদন বাড়বে ১০ শতাংশ। সম্প্রতি বিশ^ব্যাংকের এক গবেষণায় এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিশ^ব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ৮৬ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প। এইখাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ লোক কাজ করে। কিন্তু কোভিড-১৯ পরবর্তি বাংলাদেশের এইখাত বর্তমান অবস্থায় থাকবে না। তাকে আন্তর্জাতিক ও অভন্ত্যরীণ বাজারেও বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হবে। এই সমস্যা কাটাতে বিশ^ব্যাংক ৩টি পরামর্শ দিয়েছে। এ ৩টি হলোÑ দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে ম্যানেজার ও শ্রমিকদের। দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। তৃতীয়ত কারখানাগুলোকে আরও উদ্ভাবন ও টেকনোলজিক্যাল উন্নতি করতে হবে।
রিপোর্ট বলা হয়, দেশের বেশির ভাগ শিল্পমালিকরা মনে করে তাদের কারখানায় যে ধরনের উন্নতি হয়েছে তা যথেষ্ট। আর দরকার নেই। আবার অনেকে জানেনই না আগামী দিনে তাদের কারখানার জন্য কি করতে হবে। এই অবস্থা কাটাতে না পারলে কারখানায় পণ্য উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি পাবে। আগামী দিনে বিশে^র পোশাক বাজার ও অন্যান্য শিল্প বাজার অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে যাবে। বেশি মূল্যের পণ্য ক্রয় করা থেকে বিরত থাকবে ক্রেতারা। বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্যের বাজার হারাবে। প্রতিযোগী বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এমনকি আফ্রিকার কিছু দেশও বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে যেতে পারে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ৪০ শতাংশ এখনো হাতে লেখা ম্যানেজম্যান্ট ও এডমিনিস্ট্রেশনের উপর নির্ভরশীল। পণ্যের এক তৃতীয়াংশ কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা হয় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বা হাতের সাহায্যে। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে দ্রুত। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য এটি করতে হবে এখনই। দেশের কারখানাকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনে যেতে হবে। জ¦ালানি সাশ্রয়ি মেশিন নিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে যেসব কারখানা গ্যাস নির্ভর তাদের পর্যায়ক্রমে গ্যাস নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারখানায় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রয়োজনে প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাতে পণ্য উৎপাদনে খরচ কমবে। যা দিয়ে আগামীতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে।
আভ্যন্তরীণ বাজারের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিষয়ে বলা হয়, এই শিল্পগুলোতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়। সুতরাং এই খাতে আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ জনশক্তি, ডিজিটালাইজেশান এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজনে এসব উন্নতি করতে সরকার কারখানাগুলোকে স্বল্পসুদে ঋণ দিতে পারে। বা আর্থিক প্রণোদনাও দিতে পারে। শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিশেষ জোনের বাইরের কোম্পানিগুলোর জন্যও তা কিভাবে দেয়া যায় তার ব্যাবস্থা সরকারকে করতে হবে। শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানিতে বন্ডেড ওয়্যারহাউজের সুবিধা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেও বৃদ্ধি করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ^ব্যাংকের আবাসিক পরিচালক মারসি ক্যাম্বল বলেন, বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের শিল্পগুলোতে অটোমেশনের ফলে এমনিতেই কর্মসংস্থান কমে আসছে। এই অবস্থায় আরও কারখানা মালিক ও ম্যানেজারদের আরও শিক্ষিত ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে কোভিড মুক্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তেমন সুবিধা করতে পারবে না।