বারবার লকডাউনে মধ্যবিত্ত-গরিবের ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাই চ্যালেঞ্জিং
শাহিন হাওলাদার : এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ধারাবাহিকভাবে এর আগে যে লকডাউন দেওয়া হয়েছিলো, সেগুলো ঠিকভাবে কার্যকর করতে পারলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হতো না। সময়মতো ভ্যাকসিন নিশ্চিত করে মানুষের মধ্যে যদি হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করা যেত, তাহলে অর্থনীতির এতো বড় ক্ষতি হতো না।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিনের অনিশ্চয়তার কারণে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে। দেশের গরিব মানুষের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে লকডাউন দেওয়ার ফলে কখনো সুফল পাওয়া যায়নি। গরিব মানুষদের কীভাবে রেশন দেওয়া হবে, নির্দিষ্ট একটা ভাতা দেওয়া হবেÑ সে ব্যাপারে কখনোই একটি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিতে দেখা যায়নি। লকডাউনের ফলে সব চেয়ে বেশি বেকায়দা পড়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা। সরকারি চাকারিজীবীদের ওপর লকডাউনের কোনো প্রভাব পড়বে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষই বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল। দিল্লিতে লকডাউন চলাকালে গরিবদের প্রণোদনাসহ খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার শুরু থেকে যেসব ভুল হয়েছিলো তা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে এখনো প্রকৃত পদক্ষেপ নিতে পারছি না। যখন ভারতের সীমান্ত দিয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আসছে, তখনো আমরা সীমান্ত পুরাপুরি সিলগালা করতে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে তার দুর্ভোগ এখন আমাদের সবাইকে পোহাতে হচ্ছে।
দেশব্যাপী এখন যে লকডাউন দেওয়া হলো, তা যেন কার্যকরভাবে পালন করা হয়। দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের যাতে ভাত ও চাকরির কষ্ট না হয় সে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অনেক বিপজ্জনক এটা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে। আমরা কেউ ঠিকমতো মাস্ক ব্যবহার ও শারীরিক-সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছি না বলেই লকডাউন দিতে হচ্ছে। জনবহুল দেশ তাছাড়া সচেতনতার অভাব ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় এমন পরিস্থিতি বারবার তৈরি হচ্ছে। এমন লকডাউনে শুধু মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষরাই বেশি কষ্ট পাচ্ছে।
সরাকারের উচিত প্রতিটি ওয়ার্ডের কমিশনার-মেম্বার দিয়ে গরিব মানুষের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভোটার আইডি কার্ড যেভাবে নিবন্ধন করা হয় সেভাবে ব্যবস্থা নিয়ে সরকার জানতে পারে কাদের খাদের খাদ্যে দরকার। তবে কিছু এনজিও গবির মানুষদের নিরবে সাহায্য করে যাচ্ছে।
মহামারির এমন পরিস্থিতিতে মানুষদের সাহায্যর জন্য সরকারকে আরও বেশি তৎপর হওয়া প্রয়োজন। পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প যদি বন্ধ হয়ে যায় তার ক্ষতিকর প্রভাব সবার ওপর পড়বে। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষদের মধ্যে যারা করোনায় ভুগবে কিংবা করোনা থেকে মুক্ত হবে তাদের জন্য বাজেটে আলাদা প্রণোদনা রাখা উচিত ছিলো। শ্রমজীবী মানুষের কাছে যদি ন্যূনতম খাবার কিংবা টাকা সুষ্ঠুভবে পৌঁছে দেওয়া যেতো, তাহলে বর্তমান লকডাউন শতভাগ কার্যকর করা সম্ভব হতো। মানুষের চাহিদাতো বেশি নয় তারা শুধু ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে চায়। তাতে সরকারকে খুব বেশি টাকা ব্যয় করতে হতো না।
একটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও কয়েকশ কোটি টাকা ক্ষতি হয় আমাদের। ভ্যাকসিন নীতি অথবা ভ্যাকসিন দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এখনো সরকার লকডাউন দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে বাংলাদেশের ৪০ জেলা করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে। সরকার গত ঈদেও মানুষের চলাচল বন্ধ করতে পারেনি এবারও পারবে বলে মনে হয় না। তাই করোনার সংক্রমণ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচি ও সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।