
ভারতীয় চলচ্চিত্র সরাসরি আমদানির সুযোগ চায় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি

ইমরুল শাহেদ : ব্যবসা সফল ছবির অভাবে এবং এক শ্রেণির প্রদর্শক অধিক মুনাফার আশায় সিনেমা হল ভেঙ্গে শপিং মলসহ বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তাতে দেশে সংকুচিত হয়ে এসেছে প্রদর্শন ক্ষেত্র। প্রায় সাড়ে ১৩শ সিনেমা হল থেকে ৮০টিতে নেমে এসেছে। তদুপরি গত বছর থেকে করোনা মহামারী প্রদর্শন ক্ষেত্রকে আরও আঘাত করেছে। তারও আগে থেকে চলচ্চিত্রের লাগাতার বাণিজ্যিক বিপর্যয় এবং ফিল্ম থেকে চলচ্চিত্রের ভিডিওর জগতে প্রবেশও প্রদর্শন ক্ষেত্রকে সংকোচনে সহায়তা করেছে। চলচ্চিত্রের এই সংকটময় মুহূর্তে প্রদর্শক সমিতি কিছু প্রস্তাবনা রেখেছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ব্যবসাসফল ছবি ছাড়া সিনেমাহল ব্যবসার কোনো উন্নয়ন ঘটবে না। দেশে নির্মিত ছবি দিয়ে যেহেতু সিনেমাহলগুলিকে টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না, সেহেতু প্রদর্শক সমিতির দীর্ঘদিনের আবেদনের সাড়া দিয়ে সরকার যদি চলচ্চিত্র আমদানির উপর বলবৎ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারতীয় ছবি সরাসরি আমদানির সুযোগ দেয় এবং সরাসরি একই সঙ্গে দেশের সিনেমা হলে মুক্তির ব্যবস্থা করে, তাহলে ঘরমুখী মধ্যবিত্ত দর্শককে আবারো সিনেমা হলমুখী করা সম্ভব হবে। এতে সিনেমা হলের আয় নিশ্চিতভাবেই বেড়ে যাবে।
ভারতীয় ছবির আকর্ষণে দর্শককে সিনেমাহলে আসতে দেখে হলমালিকগণ যেমন দ্রুত সরকারের দেওয়া প্রণোদনা ঋণ গ্রহণ করে হলের সংস্কার ও আধুনিকায়ন করবেন, তেমনি নতুন সিনেমাহল/সিনেপ্লেক্স নির্মাণে অনেকেই এগিয়ে আসবেন। পাশাপাশি সিনেমাহলের ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উন্নতি দেখলে ব্যাংকগুলিও আগ্রহের সঙ্গে এগিয়ে আসবে ঋণ দিতে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি অনেক আগে থেকেই এই কথাগুলো বলে আসছে। এই দাবিতে ধর্মঘটে যাওয়ার ডাকও দিয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তথ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়। তথ্যমন্ত্রী তখন বলেছিলেন প্রদর্শক সমিতির দাবি মতে, বছরে দশটি না হলেও অন্তত ছয়টি ছবি আমদানির সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি সরকার চিন্তাভাবনা করছে। মন্ত্রীর দেওয়া শর্ত মোতাবেক চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের অন্য পক্ষ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি এবং শিল্পী কলাকুশলীদের প্রধান সংগঠন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সঙ্গে যৌথভাবে তিনটি সভা করে। পরিচালক ও প্রযোজক সমিতির নেতৃবৃন্দ মনে করেন যে, সিনেমাহলগুলি বন্ধ হয়ে গেলে চলচ্চিত্র ব্যবসায় যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তাতে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, সিনেমাহল না বাঁচলে চলচ্চিত্র বাচবে না। সুতরাং সিনেমা হলগুলিকে টিকিয়ে রাখা এবং চলচ্চিত্রের বাজারকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে সীমিত আকারে ভারতীয় ছবি আমদানির ক্ষেত্রে তারা যে বাধা না দিয়ে, ভারতীয় ছবি আমদানি করাকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেন।
চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির পক্ষ থেকে ভারতীয় ছবি আমদানি করার ক্ষেত্রে অনাপত্তি প্রকাশ করে পত্র দেওয়া হলেও পরিচালক সমিতি সিদ্ধান্ত অনুসারে এখনো কোনো ইতিবাচক পত্র দেন নি। নবনির্বাচিত সভাপতি যৌথ আলোচনায় উপস্থিত থেকে প্রস্তাবের অনুকূলেই বক্তব্য রেখেছেন। তার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি। শিল্পী সমিতির সঙ্গে চেষ্টা করেও বহুদিন যাবত একত্রে বসা সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে প্রদর্শক সমিতির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, গত প্রায় ৫০ বছর ধরেই বলা হয়েছে, ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করলে, দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প ধবংস হয়ে যাবে। যদিও এটি বাস্তব সত্য নয়, তবুও প্রশ্ন জাগে, ভারতীয় ছবি আমদানি না হওয়া সত্ত্বেও কেন দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প ও ব্যবসা আজ ধ্বংসের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। এরপরেও সে পুরান বুলি কপচালে একদিন হয়ত দেখা যাবে, বিদ্যমান সিনেমা হলগুলিও বন্ধ হয়ে গেছে। চলচ্চিত্রের সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া যৌথ প্রযোজনার মাধ্যমে বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবি আমরা পেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই যৌথ প্রযোজনার ছবির বিরুদ্ধেও আন্দোলনের নামে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হলো। এটা ছিলো দেশীয় ছবির ব্যবসার উপর সর্বশেষ আঘাত। এ বিষয়ে পরিচালক সমিতির সভাপতির মতামত জানতে চাইলে, তিনি বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখেই আমরা ভারতীয় ছবির আমদানির বিরোধিতা করা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মনে করি, প্রদর্শক সমিতির সুনির্দিষ্ট বক্তব্য হলো, পঞ্চাশ বছর পার হবার পর এটি এখন আর শিশু চলচ্চিত্র নেই। বরং প্রটেকশনের নামে চতুর্দিক বন্ধ একটি ঘরে আবদ্ধ হয়ে বিষাক্ত বাতাসে নিজেই মৃতপ্রায় অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
একে এখন কোরামিন দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে হবে এবং প্রতিযোগিতার বাজারে ছেড়ে দিয়ে নিজের শক্তি এবং যোগ্যতাবলে দর্শকপ্রিয়তা লাভের চেষ্টা করতে হবে। সরকার চলচ্চিত্র নির্মাণের অবকাঠামো অর্থাৎ সরকারি মালিকানাধীন স্টুডিও এফডিসিকে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে আধুনিকায়ন করেছেন। কিন্তু ছবি নির্মাণের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেই এফডিসিই এখন বিরানভূমি। ফিল্মসিটি নির্মাণেও প্রচুর টাকা দেওয়া হচ্ছে, অনুদানের ছবির পেছনে যে টাকা যাচ্ছে সেগুলোও ফেরত আসছে না। অথচ সিনেমাহল মালিকেরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ হারের রাজস্ব আদায় করে শত শত কোটি টাকা সরকারের ঘরে জমা দিয়েছে। তাদেরকে কোনো অনুদান তো কোনোকালেই দেওয়া হয়নি, বরং যে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো, সেটিও বাস্তবায়িত না হবার আশঙ্কাই দেখা দিয়েছে।
