কঠোর লকডাউন ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ সময় বাড়ল আরও এক সপ্তাহ
কেএম নাহিদ : মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শাটডাউনের সময়টায় কেউ অকারণে ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। এমন কাউকে পাওয়া গেলে নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলমান শাটডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বহাল থাকবে শাটডাউনের বিধিনিষেধ।
সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে গত বৃহস্পতিবার থেকে চলছে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন, যা সব মহলে পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে। শাটডাউন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শাটডাউনের সময়টায় কেউ অকারণে ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। এমন কাউকে পাওয়া গেলে নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। এই বিধিনিষেধ এবারও কার্যকর থাকছে।
অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার দায়ে বৃহস্পতিবার লকডাউনের প্রথম দিন ঢাকায় ৫৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় ২০৮ জনকে।
তৃতীয় দিন শনিবার ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬২১ জনকে। সে সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। চতুর্থ দিন রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে গ্রেপ্তার করা হয় ৬১৮ জনকে। এ সময় জরিমানা করা হয় ১২ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফলে বন্ধ থাকবে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসগুলো। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন বন্ধ থাকবে।
শপিং মল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান তথা ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে খোলা থাকবে আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা। যেমন: কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্যশস্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, করোনাভাইরাসের টিকাদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালস অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো জাহাজ এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞায় পড়বে না।
শিল্পকারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, বাজার কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা নিতে যাওয়া যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট দেখিয়ে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
জেলা ম্যজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সমন্বয় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সেবা দিচ্ছে। আর ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে খোলা রয়েছে পুঁজিবাজার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।