চীনের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ হ্রাস, প্রযুক্তি ফার্ম হারিয়েছে ৮৩১ বিলিয়ন ডলার
রাশিদ রিয়াজ : গত তিন মাসে এই প্রথম চীনের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের হ্রাসের কারণ মার্কিন ডলারের তেজীভাব। গত মে মাসে চীনের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৩.২২২ ট্রিলিয়ন থেকে কমে দাঁড়ায় ৩.২১৪ ট্রিলিয়ন ডলার। পিপলস ব্যাংক অব চায়না এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। ব্লুমবার্গ
চীনের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ গত জুনে আরো হ্রাস পাবে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেওয়ার পর ব্লুমবার্গ ডলার স্পট ইনডেক্স বৃদ্ধি পায় ২.৯ শতাংশ। চীনের এ্যাডমিনেস্ট্রেশন অব ফরেইন এক্সচেঞ্জের মুখপাত্র ওয়াং চুনইং পৃথক আরেক বিবৃতিতে জানান চীনা বৈদেশিক মজুদ মার্কিন ডলার স্বীকৃত এবং ডলারের শর্তে রূপান্তরিত হওয়ার পরে নন-ডলার মুদ্রায় সম্পদগুলি হ্রাস পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ হ্রাস পেলেও চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল ও যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানেই আছে। অবশ্য চীনের স্বর্ণ মজুদের পরিমান হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১১০.৪৫ বিলিয়ন ডলারে।
এদিকে চীনের বড় বড় প্রযুক্তি ফার্মগুলো ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৮২৩ বিলিয়ন ডলারের বাজার মূলধন হারিয়েছে। আলিবাবা’র মালিক চীনা উদ্যোক্তা জ্যাক মা চীনের নীতির কারণে বিদেশি প্রযুক্তি আমদানি সম্ভব হচ্ছেনা এমন মন্তব্য করার পর চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে রীতিমত অভিযানে নামে বেইজিং কর্তৃপক্ষ। এর ফলে এসব প্রযুক্তি ফার্মের বিনিয়োগ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। দিন কয়েক আগে চীনের বৃহত্তম রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ডিডি নিষিদ্ধ করা হয়। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য অবৈধভাবে সংগ্রহ করার অভিযোগ ওঠে ডিডির বিরুদ্ধে। চীনের সাইবার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ জানায়, স্মার্টফোন অ্যাপ স্টোর থেকে এই অ্যাপটি নামিয়ে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চীনের সাইবার নিরাপত্তা প্রশাসন বলছে, ডিডিকে পূর্বে চীনের তথ্য সুরক্ষা নীতি মেনে চলতে বলা হয়েছিলো। অথচ ওই নির্দেশের মাত্র চারদিন পূর্বে নিউইয়র্ক স্টক একচেঞ্জে আইপিও ছাড়ার পর কোম্পানিটি ৪.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পায়। ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক স্টক একচেঞ্জে আলিবাবার অন্তর্ভূক্তির পর এই প্রথম কোনো চীনা কোম্পানি এত বড় শেয়ারের প্রস্তাব পেয়েছিল। ডিডি বলেছে তারা নতুন ব্যবহারকারীদের নিবন্ধন বন্ধ করেছে এবং অ্যাপ স্টোর থেকে নিজেদের অ্যাপ সরিয়ে নিয়েছে। এরফলে ডিডি ১৫ বিলিয়ন ডলার লোকসান দেয়।
ডিডির মতই বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর বিধি নিষেধ তাদের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একের পর এক বিশ্বাসযোগ্যতা এবং তথ্য সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে চীনে এসব প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে ধর-পাকড় চলে। গত এপ্রিলে জ্যাক মা’র আলিবাবার বিরুদ্ধে একতরফা আচরণের অভিযোগে ২.৮ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। এরপর জ্যাক মা’র ব্যবসার আরেকটি অংশ অ্যান্ট গ্রুপকে এর নীতি পর্যালোচনার নির্দেশ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক হোল্ডিং সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভূক্তির নির্দেশ দেয়া হয়। এধরনের বিধিনিষেধের কোপানলে পড়ে টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, জে ডি কম, বাইদু ইঙ্ক ও মেইতুয়ান।
প্যাগাসাস ফান্ড ম্যানেজারস লিমিটেডের এমডি পল পং বলেন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আয়ে ধারাবাহিকভাবে ধস চলছে। দুই তৃতীয়াংশ প্রযুক্তি ফার্মের স্টক হোল্ডিংসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ১০টি চীনা প্রযুক্তি ফার্মের মধ্যে তিনটির মার্কিন বিনিয়োগ রয়েছে। হ্যাং সেং টেকের শেয়ার পতন হয় ১.৯ শতাংশ। এভাবে তারা গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাজার হারিয়েছে ৩১ শতাংশ। টেনসেন্টের শেয়ার সূচকে পতন ঘটে ১.৯ শতাংশ। আলিবাবা ১.৭ ও মেইতুয়ানের শেয়ার সূচক হ্রাস পায় ১.৩ শতাংশ। সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ফার্স্ট পার্টনার্সের গবেষক জাস্টিন ট্যাং বলেন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে চীনা প্রযুক্তি ফার্মগুলো আগে বিক্রি করে মূলধন উদ্ধার এবং পরে অন্য কথা বা বিনিয়োগের চিন্তা করছে।