রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় আগুন এটি দূর্ঘটনা নয়, হত্যাকান্ড -হায়দার আকবর খান রনো
সেজান জুস তৈরিতে ব্যবহার হয় হ্যাজার্ডাস কেমিক্যাল বিএসটিআই’র থেকে বহুবার লিগ্যাল নোটিশ দিলেও কর্ণপাত করেনি তারা -অ্যাডভোকেট দিলরুবা শরমিন
প্রিয়াংকা আচার্য্য : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রæপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস এর সেজান জুস, কোমল পানীয় ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তৈরির কারখানায় লাগা আগুনে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫২ জন। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগে।
শুক্রবার ভোরের দিকে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসে গেলেও সকালে পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় নতুন করে আগুন বেড়ে যায়। কারখানায় আটকা পড়া কর্মীদের সন্ধান না পেয়ে ততোক্ষণে বাইরে জড়ো হওয়া স্বজনরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর বিকাল ৭টা পর্যন্ত ভবনের উপরের দুটি ফ্লোরের আগুন পুরোপুরি নেভাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
কারখানার একটি সিঁড়ি বন্ধ না থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন। তিনি ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গাড়ির মই সেট করে ছাদ থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করেছি। বাকিরা যদি ছাদে উঠতে পারতো, আমরা কিন্তু বাঁচাতে পারতাম।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট বামপন্থী নেতা ও বুদ্ধিজীবী হায়দার আকবর খান রনো আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, ‘এটি নিছক কোন দূর্ঘটনা নয় বরং হত্যাকাÐ। কারণ ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি, ছাদের দুটি দরজার একটি বন্ধ ছিল। অর্থাৎ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এটি বন্ধ না থাকলে এতো মানুষ মারা যেতো না।’
‘এ ধরনের ঘটনা আমরা এর আগেও লক্ষ্য করেছি। আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টসে আগুন লাগার পর বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ফলে বের হতে না পারার কারণে বেশি সংখ্যক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। কারখানার লোকজন ভাবে যে, আগুন লাগলে তাদের মালামাল লুট হবে। তাই তারা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় যেন ভেতরের লোক বের না হতে পারে। তারা নিজেদের মালামালের কথা চিন্তা করে অথচ অসহায় শ্রমিকদের জীবনের গুরুত্বের কথা ভাবে না।’
‘আমি বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর করতে চাইছি। তিনি বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এভাবে নিরীহ শ্রমিকদের হত্যা করতে না পারে।’
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী দিলরুবা শরমিন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সেজান জুস বা এমন কোমল পানীয় তৈরিতে প্রিসার্ভেশনের জন্য হ্যাজার্ডাস কেমিক্যাল (দাহ্য পদার্থ) দেয়া হয়। যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এসব কেমিক্যাল সর্তকতার সঙ্গে ব্যবহার করা না হলে যেকোনও সময় বড় ধরনের অগ্নিকাÐ ঘটার আশঙ্কা থাকে।’ ‘বিএসটিআই’র পক্ষ থেকে হাসেম ফুডসকে বেশ কয়েকবছর ধরে বহুবার লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা কর্ণপাত করেনি। হাসেম ফুডসের বিরুদ্ধে অনিয়মের জন্য প্রচুর মামলা ইতিমধ্যে আছে। সেগুলো শুরু তো হয় কিন্তু রহস্যজনক কারণে বেশি দূর এগুতে পারে না। এ ঘটনার ফলে বিএসটিআই বড়জোর তাদের সিএম লাইসেন্স বাতিল করবে।’ ‘হাশেম ফুডসের ইন্সুরেন্স করা আছে। ফলে কোম্পানি তাদের ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবে। কিন্তু যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণে সজীব গ্রæপ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করা উচিত।’