তানিমা শিউলি : সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, বিপুল পরিমাণ পরিবহন শ্রমিক প্রান্তিক শ্রমিকগোষ্ঠীর বড় একটা অংশ। তাদের রোজকার খাবার রোজ উপার্জন করতে হয়। পরিবহন খাতে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে সরকারের দায়বদ্ধতার জায়গাটিতে ঘাটতি রয়েছে। সরকারের উচ্চমহল থেকে পরিবহন খাতে কর্মরতদের জন্য কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। পরিবহন খাতে ড্রাইভার থেকে হেলপার, সুপারভাইজার লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। শুধু পরিবহন শ্রমিক নয়, পরিবহন মালিকরাও এই খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করে থাকেন। তারাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। যার কারণে লকডাউনের সময়টাতে শ্রমিকদের সাহায্য করা মালিকদের পক্ষেও সম্ভব হয় না। তবে পরিবহন মালিকদের হয়তো উপার্জনের অন্যান্য খাত থাকতে পারে, কিন্তু অনেকেই আছেন তারা শুধু পরিবহনের আয়ের উপর নির্ভরশীল। তারাও বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন।
তারপরেও সরকার কতোগুলো খাতের দায়িত্ব নিতে পারবে? সরকারের ও সীমাবদ্ধতা আছে, সেটিও ভাববার বিষয়। তবে লকডাউন যে নীতিমালা মেনে দেওয়া হচ্ছে, সে জায়গাটিতে সংশোধন করা দরকার। এই শ্রেণিপেশার মানুষগুলোকে ঘরে আটকে রাখা সম্ভব নয়। প্রণোদনা দিয়ে ঘরে আটকে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাদের কাজের মধ্যে রাখতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। তাহলেই শ্রমিকদের বড় একটি অংশের জীবন-জীবিকা রক্ষা পাবে। যারা দূরবর্তী কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারাও উপকৃত হবেন। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে তাদের যেন রাস্তায় নামানো যায়, সেদিকটাতে গুরুত্ব দিলে সরকারের জন্যও ব্যয় লাঘব হয় এবং শ্রমিকদের বেঁচে থাকার অবলম্বনটাও সুরক্ষিত থাকে।
সরকার তাদের জন্য কোন কাঠামো অনুসরণ করবে, তার দিকনির্দেশনা সুস্পষ্ট করা জরুরি। অর্থনৈতিক গতিটাও যেন চালু থাকে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলে অনেকটা সুবিধা পাওয়া যায়, যেটা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে আরও কিছু মানুষের জীবন যেন অনিশ্চয়তায় না পড়ে যায়। এসব মানুষের যদি আয় না থাকে, খাবার কোথায় পাবে? একেকজনের পরিবারে প্রবীণ সদস্য আছেন, শিশু আছে, নারী আছেন, তারা ওই উপার্জনক্ষম লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। খাবারের অভাবও কিন্তু মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ। এ ধরনের পরিস্থিতি আসলেই উদ্বেগজনক।