কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় ৮ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা লন্ডন কানাডাসহ ৫০ এর বেশি দেশে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে
মো. আখতারুজ্জামান : বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে দের বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। করোনার শুরুতে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনে বড় ধরণের প্রভাব পড়ে। সাপ্লাই চেইন বন্ধ থাকায় থমকে যায় রপ্তানি ও আমানি কার্যক্রম। তবে সেই অবস্থা থেকে কাঠিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
গতবছর করোনার শুরুতে কয়েক মাসে যে ক্ষরা ছিলো সেটা কেটে উঠেয়েছে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে। এসব কৃষিজাত পণ্য সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, লন্ডন, কানাডাসহ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানিতে কৃষি পণ্যে বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করছে সরকার।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০২ কোটি ৮১ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৯ ভাগ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে শুকনো খাবার।
গত অর্থবছরে ২৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের শুকনো খাবার রপ্তানি হয়েছে। যা দেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরে মসলা রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। এছাড়া অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪৯ কোটি ২৩ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের চেয়ে ২৭ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি।
জানা যায়, রপ্তানিকৃত কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে, চা, সবজি, ফুল, ফল, মসলা, শুকনো খাবার ইত্যাদি। আলু, ধনিয়া পাতা, লাউশাক, বরবটি, কাঁকরোল, করল্লা, ঝিঙে, লালশাক, বেগুন, টমেটো, পটল, কচু, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, লাউ, পেঁপে, কলা, শসা, শিম, বাঁধাকপি, মরিচ, মুলাসহ অর্ধশতাধিক সবজি।
বাংলাদেশে তৈরি শুকনো খাবারের চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। প্রবাসী বাঙালিরা এসব খাবারের মূল ক্রেতা হলেও এর প্রতি আগ্রহ রয়েছে বিদেশিদেরও। অন্য পণ্যের চেয়ে কৃষিপণ্য তুলনামূলকভাবে বেশি পচনশীল। এজন্য এসব পণ্য দূরদূরান্তে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থাপনা এখনো ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। কীভাবে পণ্য পাঠানোসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা করা যায়, নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার জন্য করণীয়, পণ্যের প্যাকেজিং, অন্য দেশে যাতে পণ্য স্ক্যানিং না করা লাগে সেজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি বা উদ্ভাবন, পণ্য পরিবহনের ভাড়া কমানোর উপায় প্রভৃতি নিয়ে এখনো আমাদের দেশে সেভাবে কোনো গবেষণা নেই। পরীক্ষাগারও গড়ে ওঠেনি। ফলে কৃষিপণ্য রপ্তানির যে সম্ভাবনা, তা বাস্তবায়ন ও দীর্ঘমেয়াদি করতে এসব কাজ করা জরুরি।
অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাড়ে ছয় বছর পর ইউরোপে পুনরায় পান রপ্তানি শুরু হয়েছে। গত ২৬ মে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ঢাকার শ্যামপুরে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে ইউরোপে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পান রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। প্রথম চালানে রপ্তানি হচ্ছে এক টন পান। ইইউ’র আরোপিত শর্ত পূরণ করতে পারায় গত ১৫ এপ্রিল ২০২১ সালে পান রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ২০১২-১৩ সালে ১৮ হাজার ৭৮০ টন ও ২০১৩-১৪ সালে ১৩ হাজার ২৫০ টন পান রপ্তানি হয়। যার মূল্য যথাক্রমে ৩৮ মিলিয়ন ও ৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।