কমপক্ষে ৫০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া গেলে অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় রাখা যাবে
আমিরুল ইসলাম : অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, লকডাউনে দিনমজুরদের আয়-রোজগার না থাকায় তারা ক্ষুধার শিকার। আমেরিকার দাতব্য সংস্থা অক্সফাম যে বলছে প্রতি মিনিটে বিশ্বে ক্ষুধায় ১১ জন মারা যাচ্ছে, সেটিও কিন্তু করোনার প্রভাবেই। বিশ্বে শুধু করোনা মহামারীর কারণে নতুন করে লাখ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। কারা গরিব, কারা খেতে পারছে না, কাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে, কারা বেকার হয়ে গেছেÑ এই হিসাবগুলো জানবে কমিউনিটির লোকেরা। অর্থাৎ এলাকার লোকেরা।
সরকার যদি এই শ্রেণিকে কোনো প্রণোদনা দেয়, সেখানেও সমস্যা হচ্ছে যাদের সাহায্য পাওয়া উচিত তারা পাচ্ছে না। যাদের দরকার নেই তাদের কাছে সহায়তার পণ্য বা টাকা যাচ্ছে। এটির মূল সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। সরকার এক্ষেত্রে কমিউনিটিকে যুক্ত করেনি। প্রত্যেক এলাকায় কিছু সমাজ নেতা থাকে, তাদের দায়িত্ব দিলে কাজটি সহজ হতো। কিন্তু সেটা না হয়ে একদম আমলানির্ভর থেকে গেছে। স্থানীয় সরকার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতো। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারকে দায়িত্ব দিলে, তারা সঠিক তালিকাটি তৈরি করতে পারতো।
তবে সমস্যাটি হচ্ছে, দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র নেই। প্রকৃত গণতন্ত্রের অনেক দিক আছে, তার মধ্যে একটি দিক হলো সুষ্ঠু নির্বাচন। মানুষ যাকে পছন্দ করে সে লোকটি নির্বাচিত হবে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ বা জাতীয় পরিষদ নির্বাচন বলি কোনো নির্বাচনই এখানে সুষ্ঠুভাবে হয়নি। প্রায় অভিযোগ ওঠে পেশিশক্তির জোরে জনপ্রতিনিধি বিজয়ী হন। এ ধরনের দুর্নীতি করে যারা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে, গরিব লোকদের সাহায্য দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে তাদের দায়িত্ব দিলে, স্বাভাবিকভাবে সেটি ব্যর্থ হবে। তারা তো আসলে প্রকৃতভাবে জনগণের নির্বাচিত লোক নন।
এই জায়গাটাতেই বাংলাদেশের সমস্যা। অর্থাৎ একটি নির্বাচন ব্যবস্থা যদি ভেঙে পড়ে তাহলে নানামাত্রিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে এই কোভিডের মুহূর্তে লক্ষ্য করা যাচ্ছে সঠিকভাবে নির্বাচন না হলে তাদের দিয়ে সাধারণের জন্য কাজ করানো যায় না। লকডাউন থাকুক আর না থাকুক ঈদ কেন্দ্রিক অর্থনীতি খুব একটা সমৃদ্ধ হবে না। কারণ হচ্ছে কোভিডের জন্য মানুষের মনে উৎসববিমুখ একটি পরিবেশ বিরাজ করছে। এমনিতেই সারা বিশ্বে অনেক দেশের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এর মধ্যেও প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতো থাকে সেটি দেখার বিষয়। বাংলাদেশ তো অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যতিক্রম থাকতে পারে না। যদি কোভিড আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। অনেক দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে গেছে অনেক দেশ।
যারা কোভিডকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেছে, সেসব দেশ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
আমরা যদি করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং ভ্যাকসিনেশন ব্যাপকভাবে করা যায়। কোভিডকাল চলতে থাকলে আমাদের অর্থনীতিতে ধসের আশঙ্কা আছে। ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ লোককে টিকা দেওয়া যায় তাহলে অর্থনৈতিক ধস ঠেকানো যাবে। কিন্তু যে হারে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাতে এক বছরেও মনে হচ্ছে না টিকা কার্যক্রম শেষ হবে। কাজেই এখানে আমাদের কাঠামোগত সমস্যা। টিকাদান কর্মী আছে কিনা, নার্স আছে কিনা, তাদের তত্ত্বাবধান করার জন্য ডাক্তার আছেন কিনা সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে।
এমনিতেই বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ, বহু লোক বাস করে অল্প জায়গায়। তাদে ৭০-৮০ শতাংশ লোককে টিকাদানের আওতায় আনা সহজ ব্যাপার নয়। এবারে তো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য কাঠামো অত্যন্ত জরাজীর্ণ এবং দুর্বল। ইউনিয়ন পর্যায়ে আমরা স্বাস্থ্য অফিস খুলেছি সেখানে ডাক্তার নেই, ওষুধ পাওয়া যায় না। জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য প্রতিনিধিদের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া জরুরি ছিলো। মানুষকে বোঝানো প্রয়োজন তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহী হয়। বারবার লকডাউন দেওয়া সমস্যার সমাধান হতে পারে না।