‘সাধারণ মানুষকে কর্মহীন রেখে স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাবে না’
আমিরুল ইসলাম : এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মহামারীর অনিবার্য প্রভাবক ভূমিকা। মহামারীকালীন সময়ে যখন মানুষের খাদ্য-সাহায্য সরবরাহ, আর্থিক সক্ষমতা যখন দিন দিন নিঃশেষ হয় যায় তখন এ ধরনের মানুষের নানা রকম চৌর্যবৃত্তি থেকে অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত হয়ে যায়। একই সময়ে সমাজে বৈষম্য থাকলে এটা আরও বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করে। সবাই সহানুভূতিশীল থাকলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যায়। কারণ সরকারের একার পক্ষে মহামারিকালীন দুর্ভিক্ষ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সমাজে যারা বিত্তবান রয়েছেন তারা যদি প্রতিবেশীদের সহোযোগিতায় এগিয়ে না আসেন, তাহলে এই প্রতিবেশীরাই একসময় নগ্নভাবে আক্রমণ শুরু করবে এবং প্রতিক্রিয়া শুরু করবে। যার কারণে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হবে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, মহামারীর এই সংকটকালীন সময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হবে। লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধ না দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা না করে আমরা আটকে রাখতে পারবো না। তাই অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে স্বাভাবিক করতে হবে। সকল অর্থনৈতিক কর্মকা-কে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে।
সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য প্রত্যেককে নিজ উদ্যোগে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনা টেস্ট করে নিশ্চিত হতে হবে, করোনা পজিটিভ কিনা। করোনা টেস্টকে গণমুখী করতে হবে। তাড়াতাড়ি যেন রিপোর্ট পাওয়া যায় সে ব্যবস্থ’া করতে হবে। করোনা এখন খুব সহযে শনাক্তযোগ্য নয়। কারণ এটি এখন সিমটমহীন পরিস্থিতিতে গেছে। সুতরাং সকলকে গণপরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষা করে যার যার সতর্কতা অবলম্বন করে অন সব কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন স্বাভাবিক থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেই সমাজ আর অস্থিশীল হবে না। মানুষের মৌলিক চাহিদা হচ্ছে সনাতন একটি দাবি, এটাকে কোনোভাবেই এভয়েড করা যাবে না।
উন্নত দেশগুলোতে ১৫ মিনিটের মধ্যে করোনা টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে তার কাজকর্ম করতে পারছে। সবাই ব্যবসা-বাণিজ্য কাজ করতে পারছে। সার্চ মহামারীর সময়েও উন্নতি বিশে^ এরকম দ্রুত সময়ে শনাক্ত করার ব্যবস্থা ছিলো। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য অনুরোধ করতে হবে এবং সচেতন করতে হবে। মাস্ক ও স্যানিটাইজারকে সহজলভ্য করতে হবে। সেচ্ছাসেবীরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করতে পারে।
অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও ছোট দেশগুলো লকডাউন দিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি এবং দিন এনে দিন খাওয়া লোক অনেক। তাই আমাদের দেশে লকডাউন দিয়ে রাখা যাবে না। যেভাবে হোক করোনার টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। টিকার পাওয়ার বিষয়ে মানুষকে আস্থার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। টিকার বিষয়ে সরকারকে আস্থাশীল পরিবেশ অবশ্যই সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি বলেন, সামাজিক বৈষম্য, অনিয়ম, অন্যায়, অবিচারÑ এইগুলোর ব্যাপারে সরকারকে দৃর্ষ্টি রাখতে হবে। মানুষ যদি দেখে সমাজে অন্যায়-অবিচার হচ্ছে, তারা শোষণ হচ্ছে, তাহলে আস্থার পরিবেশ থাকবে না। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় মানুষ এরকম কিছু কারণে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলো।
সরকারকে রেশনিং সিস্টেম চালু করতে হবে। সকলকে খাদ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষ মারমুখো হয়ে যাবে। বড় বড় ব্যাবসায়ীরা অনেক লাভ করছে কিন্তু তারা সাহায্য সহযোগিতা করছে না তেমনভাবে। তারা সাহায্য-সহযোগিতার ঘোষণা দিলে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হতো। সমাজের বিত্তবান সকলকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সরকার সৃষ্ট বা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ যেন না হয় সেজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বৈষম্য দূর করা ও আস্থা সৃষ্টি করতে না পারলে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থাবিধি মানানো যাবে না। সম্পাদনা : রেজা