আগের তুলনায় কম দামে ভ্যাকসিন কেনা হচ্ছে : অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : চীনের সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি করোনা ভ্যাকসিন ক্রয়সহ ৬টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। ভ্যাকসিন ক্রয় ছাড়া ৪টি ক্রয় প্রস্তাবে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৭৫১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া দর সংশোধনের একটি প্রস্তাবে ব্যয় কমেছে ৩ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের জানান, ‘সিনোফার্ম ভ্যাকসিন সাপ্লিমেন্টাল এগ্রিমেন্ট-১’-এর আওতায় চীনা প্রতিষ্ঠান ‘সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল’ থেকে চুক্তিবদ্ধ ১ কোটি ৫০ লাখ ডোজের মধ্যে অবশিষ্ট ১ কোটি ৩০ লাখ ডোজ এবং নতুন প্রস্তাবিত ২০ লাখ ডোজসহ সর্বমোট দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় কেন্দ্রীয় ঔষধাগার এই ভ্যাকসিন আমদানি করবে। ইতিপূর্বে চুক্তিপত্রে উল্লিখিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে ভ্যাকসিন কেনা হচ্ছে বৈঠকে জানান তিনি।
ভ্যাকসিন ক্রয় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগের তুলনায় কম দামে চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন কেনা হচ্ছে। এটার জন্য আমরা আগে একবার পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম, আবারও পেছনে পড়ার সম্ভাবনা আছে। এ পারচেজগুলো সিলেকটিভ পারচেজ। এগুলোর সম্পর্কে টেকনিক্যাল ডিটেইলস বলা সম্ভব হচ্ছে না।
কতদিনের মধ্যে ভ্যাকসিন আসবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আছে, তারা বলতে পারবে ঠিক কোন সময়ে আসবে। এটা নিয়ে সবকিছু করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক করা হয়েছে, এখন এটার ডিটেইলস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানতে পারবেন।
প্রতি ডোজে ৩ হাজার টাকা খরচের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, যে প্রকল্প সেটি নিয়ে যতটুকু সম্ভব আলাপ করেছি। বাকিটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানাবে।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কার্গো আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কার্গোটি আমদানি করবে পেট্রোবাংলা। এতে এলএনজি’র পরিমাণ ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ। সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ‘এওটি ট্রেডিং এজি’ এই কার্গো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৪৩৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
তিনি জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ‘বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে যৌথভাবে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘রাইটস লিমিটেড’ ও ‘আরভী অ্যাসোসিয়েটস আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে বিসিআইসি কর্তৃক নরসিংদী জেলায় অবস্থিত ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ প্রকল্প বাস্তবায়নে যৌথভাবে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে- মিশরের ‘আরব কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স মোহররম বাখুয়াম’ ও ‘ন্যাশনাল মেইন্টেন্যান্স কো-অপারেশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস’ এবং দেশিয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড’। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
তিনি জানান, বৈঠকে বিসিআইসি কর্তৃক ‘ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড’ (ডিএপিএফসিএল)-এর জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দশ হাজার মেট্রিক টন করে তিনটি লটে দুবাই ভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান এই এসিড সরবরাহ করবে। এর মধ্যে ১ম ও ৩য় লটটি (মোট ২০ হাজার মেট্রিক টন) সরবরাহ করবে ‘জেনট্রেড এফজেডই’ (স্থানীয় এজেন্ট: মেসার্স দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন, ঢাকা)। দ্বিতীয় লটটি (১০ হাজার মেট্রিক টন) সরবরাহ করবে ‘সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই’ (স্থানীয় এজেন্ট: মেসার্স আর কে এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা)। তিনটি লটে মোট ব্যয় হবে ১৭৭ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, এছাড়া ‘এসেনশিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানী লিমিটেড’-এর তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপনে ব্যয় হ্রাস হওয়ায় এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি সংশোধনের (ভেরিয়েশন) প্রস্তাব বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী নির্মাণ ব্যয় ৩ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা কমে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। কারখানা স্থাপনের কাজটি করছে ‘মেসার্স বাংলাদেশ ফাউন্ড্রি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড’। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা