হংকংয়ে আম রপ্তানির নতুন দ্বার উম্মোচন
কেএম নাহিদ : স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আম রপ্তানি হলো হংকংয়ে। হংকংয়ে আমের প্রথম চালানটি পৌঁছে সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায়। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানে বাংলাদেশের রপ্তানিকারক এমটিবি অ্যাগ্রো অ্যান্ড গার্ডেন হংকংয়ের এক্সিয়াম রিসোর্স লিমিটেডের কাছে আম পাঠায়। বাংলাদেশ ফল সবজি অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন সদস্য ও হংকংয়ে আম রপ্তানিকারক মাহতাব আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কন্ট্রাক্ট ফার্মার আহসান হাবিবের ম্যাংগো প্রজেক্টের আম্রপালি, ফজলি ও বারি৪ আম হংকংয়ে রপ্তানি করা হয়েছে।
দেশি কয়েকটি সপিং মল ও প্রতিষ্ঠানের কাছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত আম আমার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নামে প্যাক করে সরবরাহ করে ব্রান্ড ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আকর্ষণীয় ও উপহার প্রদানের উপযোগী উন্নত ও দৃষ্টিনন্দন বক্স করে আম প্যাক করছি। এ মৌসুমে দেশে-বিদেশে আরো আম সরবরাহের জন্য বুকিং দেয়া আছে। এমটিবি অ্যাগ্রো অ্যান্ড গার্ডেন এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. মাহতাব আলী আরো জানান, নিজেই হংকং এবং বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে আম রপ্তানির ব্যবস্থা করেছি।
দেশে আম রপ্তানির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকা ও কার্গো বিমানে সুন্দরভাবে লোড না করায় আম নষ্টের ঝুঁকি থাকে। আপাতত এ দুটি বড় সমস্যা বলে মনে হয়েছে। আম রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পেস্টিসাইড অ্যানালাইটিক্যাল ল্যাবরেটরি কীটতত্ত্ব বিভাগে আম পরীক্ষা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী মূল রপ্তানিকারক দেশ এই সনদপত্র দিয়ে থাকে। রপ্তানিকৃত পণ্যে ক্ষতিকারক কিছু নাইÑ এ জন্য এই সনদ। সনদের জন্য সংবেদনশীল ও ব্যয়বহুল এমআরএল (ম্যাক্সিমাম রেসেডিউ লেভেল) পরীক্ষা করতে হয়। এই পরীক্ষা করে বোঝা যায় যে ব্যবহৃত কীটনাশক বা সারের কোনো প্রভাব ফসলে আছে কিনা এবং তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক কিনা।
আমচাষী ও কন্ট্রাক্ট ফার্মার আহসান হাবিব জানান, গত মাসে আমার প্রজেক্টের জিআই পণ্য ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া ও আম্রপালি আমের তিনটি বড় চালান আরেক রপ্তানিকারক নিয়ে সুইডেনে সরবরাহ করেছেন। এবার হংকংয়ে পাঠানোর জন্য বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মাহতাব আলী কয়েক দফায় আম নিয়েছেন এবং এ মৌসুমে ব্যানানা ও গৌড়মতি, বারি৪, ফজলি ও আম্রপালি আরো আম নিবেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, কন্ট্রাক্ট ফার্মার আহসান হাবিব কয়েক দফায় বিদেশে রপ্তানির জন্য আম সরবরাহ করেছেন। ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস জানান, আম রপ্তানিতে কার্গোভাড়া কমানো এবং প্রণোদনা প্রদানসহ উৎপাদনকারীদের বীমার ব্যবস্থা করতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হবে যার বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
বৃহত্তর রাজশাহী সমিতি, ঢাকা এর সভাপতি প্রকৌশলী ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহতাব উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ সরকার প্রধান সারা বিশ্বে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের আম উপহার দিবেন বলে শুনেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানাই যদি এমন হয় তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম যেন নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরামসহ প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আম উপহার দিয়েছেন। আমরা আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী খুব খুশি হয়েছি। আরো খুশি হতাম যদি আমাদের অন্য জাতের আম উপহার দেয়া হতো।
তিনি আরও বলেন, আম রপ্তানিতে আরো বেশি সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন। রপ্তানি বাজার ও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে আশির দশকে গার্মেন্টস শিল্পে যেমনভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল ঠিক তেমনি আম রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়া জরুরি। চাঁপাইনবগঞ্জের আম রপ্তানিযোগ্য প্যাকিং নিশ্চিতকরণ, সহানীয়ভাবে সঙ্গনিরোধ সনদের ব্যবস্থা, ভেপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সুযোগ তৈরি করা, আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদনে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করতে হবে।
আম সংশ্লিষ্ট ও উদ্যানতত্ত্ববিদরা দাবি জানানÑ বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে বাজার অনুসন্ধান করা, বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আমের মৌসুমে আম উৎপাদনকারী জেলাগুলো পরিদর্শন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশীয় আম বাগান পরিদর্শন করানো, আম রপ্তানি করার জন্য প্যাকেজিং সামগ্রির ওপর ভর্তুকি প্রদান করা, পরিবহন বিমানের ব্যবস্থা ও ভাড়ার হার সহনীয় রাখা, বিদেশে রপ্তানির জন্য শুল্ক না নেয়া, আম বিদেশে সম্প্রসারণ করার জন্য সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং আম রপ্তানির জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হোক।