রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি ১৭,৪২৫ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর সঙ্গে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ)-এর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি কমিয়ে আনতে পারেনি ব্যাংকগুলো।
লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় স্থিতির পরিমাণ ১৬২ কোটি ১৮ লাখ টাকা বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও গত ছয় মাসে ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণের মোট স্থিতি ৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কমেছে। গত ডিসেম্বর শেষে ছয় ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের মোট স্থিতি ছিল ১৭ হাজার ৪৮৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে সমাপ্ত অর্থবছরে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো মোট আদায় করেছে ১৩২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, একমাত্র বিডিবিএল ছাড়া অপর পাঁচটি ব্যাংকে অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি সবচেয়ে বেশি সোনালী ব্যাংকে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে একমাত্র জনতা ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা করতে পেরেছে। আদায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বেসিক ব্যাংক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এপিএ’র আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে সোনালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গত জুন শেষে সোনালী’র অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে এপিএ’র আওতায় গত অর্থবছরের অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ব্যাংকটির আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৩৯ কোটি টাকা।
এপিএ’র আওতায় অগ্রণী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে অগ্রণী’র আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৪০ কোটি টাকা।
জনতা ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে জনতা’র আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বিডিবিএল-এর অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বিডিবিএল-এর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
রূপালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৯৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রূপালী’র আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এপিএ’র আওতায় বেসিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বেসিক-এর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৮০ লাখ টাকা।