তানিমা শিউলি : স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, দুই ধরনের সমস্যার জন্য চালের দামটা বেড়ে যায় বলে মনে হয়। তবে সাধারণত আমাদের দেশে যা হয় কৃষকরা বাড়তি দামটা কখনো পান না। চালের দাম বাজারে ১০০ টাকা কেজি হলে কৃষক হয়তো সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পান।
ভোক্তাদের বেশি দামে ক্রয়মূল্য মধ্যসত্বভোগীরা ভোগ করে থাকেন। এই মধ্যসত্বভোগীদের আবার নানান রকম ধাপ রয়েছে, তাদের সংখ্যাও অনেক। কৃষকের কাছে ৩০ টাকা কেজি চাল কিনে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছতে ৬০ টাকা কেজি হয়। আমি মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন পায়, সেক্ষেত্রে আমার হয়তো ৫০-৬০ টাকা কেজি চাল কিনে খেতে বেগ পেতে হয় না। কারণ আমাদের মতো যারা আছে তাদের মোট আয়ের সামান্য অংশ খরচ হয় চাল কিনতে। কিন্তু যারা গরিব মানুষ, যারা দিন মজুর তাদের জন্য একই দামে চাল কিনে খাওয়াটা কষ্টের হয়ে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য মধ্যসত্ত্বভোগীরা হচ্ছে এক নম্বর কারণ।
চাতাল ব্যবসায়ীদের মোটা চাল চিকন করার মতো পদ্ধতি গ্রহণ করে চালের দামে কারসাজি করা। আসলে যেটি হয় কৃষকরা তাতে তাদের উপযুক্ত মূল্য পান না, মুনাফা লাভ করে মধ্যসত্ত্বভোগীরা। আমাদের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশে চালের দাম অনেকটাই সহনশীল। কারণটা হচ্ছে তাদের দেশে মার্কেটিং ব্যবস্থা অনেক ভালো। তাদের মার্কেটিং নিয়ে গবেষণা আছে, প্রাইস কমিশন আছে, সরকার আগে থেকে কিনে নেয় এবং দামটা নতুন করে কতো হবে সেটাও ঠিক করে দেয়।
ফলে হঠাৎ করে দাম পড়ে যায় না বা আবার বেড়েও যায় না। বড় বাজারে চাল অনেকটা রিফাইন্ড হয়ে আসে, এটির কারণেও দাম বেড়ে যায়। দালাল, ফড়িয়া, মহাজনদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় দামটা বেড়ে বেড়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে চাল আমদানি করতে পারলে দাম কিছুটা কমবে, তবে সেটি সাময়িক। কিন্তু আমরা জানি যে চাল রপ্তানিকারক দেশ মাত্র গুটিকয়েক। এটি বিবেচনায় এবং আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই আমদানির ওপর নির্ভর করলে চলবে না। উৎপাদন কমে গেলে যে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি তৈরি হবে সেটি আমদানি করে কুলোবে না।
মার্কেটিংয়ের অব্যবস্থাপনার জন্য অনেক সময় খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত হলে দেখা যায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশির ভাগ কৃষক ঋণ নিয়ে ফসল করে, সেখানে সফল হলেও হঠাৎ করে দাম পড়ে যাওয়া, কৃষকদের নিঃস্ব করে দেয়। এসব কারণে মানুষ কৃষিবিমুখ হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। শিল্প-কারখানার দিকে ঝুঁকছে মানুষ। ধীরে ধীরে ধান উৎপাদনের প্রতি কৃষক শ্রেণির অনীহা তৈরি হচ্ছে, যেটি ভবিষ্যতের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে আমাদের দেশে শিল্পায়নের প্রতিযোগিতা হচ্ছে সেখানে চালের বা ধানের দাম উপযুক্ত না হলে কৃষকরা পিছিয়ে আসবে ধান-চাল উৎপাদন থেকে। এটি বিবেচনায় চালের দামের সামঞ্জস্য রাখতে হবে। সরকারের এ ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদী পলিসি গ্রহণ করতে হবে। তবে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে এই সমস্যা সামাল দিতে মোটা চাল আমদানি করলে গরিবদের উপকারই হবে।