হংকংয়ে ব্যবসা ঝুঁকির জন্যে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র
রাশিদ রিয়াজ : বাইডেন প্রশাসন হংকংএ মার্কিন কোম্পানিগুলোর ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি সম্পর্কে জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরির ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা করছে যা এসব কোম্পানিকে বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হবে। সাংবাদিকদের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন তার প্রশাসন কোম্পানিগুলোকে ওই অঞ্চলে ‘অবনতিশীল’ পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করবে।
বাইডেন বলেন হংকংয়ের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে এবং চীন সরকার এ ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না। গত ৫০ বছর ধরে চীন হংকংয়ে আধা স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থা বজায় রাখার ব্যাপারে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই হংকং পরিস্থিতি কখন কোথায় দাঁড়াবে সে সম্পর্কে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে আগেভাগে জানানো হবে। সিএনএন
ওয়াশিংটন এর আগেও হংকং’এ গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ও সরকার বিরোধি প্রতিবাদ নিয়ে সতর্ক করেছে। গত বছর চীন হংকং’এ জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু করে। এ মধ্যে দিয়ে হংকং’এর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে চীন। এ ধরনের আইনের কারণে হংকং’এর যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তা ক্ষুণœ হয়েছে বলে পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে। হংকং’এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষত শুল্ক সুবিধার ক্ষেত্রে ও কিছু বাণিজ্যিক নমনীয় মনোভাব থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এপর হংকং’এর প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরা সবাই চীন সরকারের অনুগত। এদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে হংকং ভিত্তিক অ্যাডামাস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ব্রোক সিলভার্স বলেন বাইডেন প্রশাসন খুব শীঘ্রই কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। হংকং’এর ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সম্পর্কে যাতে মার্কিন কোম্পানিগুলো অজ্ঞ না থাকে সে ব্যবস্থা নেবে বাইডেন প্রশাসন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিতর্কিত সম্পর্ককে বরং বাইডেন প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত প্রতিফলিত করছে। হংকং এবং জিনজিয়াং থেকে শুরু করে বিগ ডেটা, বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ সবকিছুর মধ্যে উভয় দেশ সংঘাতে ও বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার কারণে দুটি দেশের মধ্যে বছরের পর বছর সম্পর্ক হ্রাস পাচ্ছে। একই কারণে মার্কিন কোম্পানিগুলো এমনিতেই হংকং বা চীনে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা সতর্ক হয়েই চলছে।
গত জানুয়ারিতে এ্যাপারেল ও ফুটওয়ার কোম্পানি ভিএফ করপ আভাস দিয়ে বলে হংকং ছেড়ে তারা এশিয়ায় ব্যবসা স্থানান্তরিত করতে পারে। সিঙ্গাপুরে ভিএফ করপের ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমনকি তারা মালয়েশিয়াতেও ব্যবসা সরিয়ে নিতে আগ্রহী। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে তাদের ব্রান্ড কার্যক্রম সাংহাইতে সরিয়ে নিয়েছে। দি নিউ ইয়র্ক টাইমস এর আগে হংকং থেকে ডিজিটাল পরিচালনা সিওলে সরিয়ে নেয়। প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যেমন ফেসবুক, গুগল ও টুইটার। বাইডেন প্রশাসনের নীতি ও কৌশল নিয়ে এসব কোম্পানি পর্যালোচনা করছে। গত মাসে আমেরিকান চেম্পার অব কমার্স হংকং’এ গণতান্ত্রিকমনা অ্যাপেল ডেইলির সাংবাদিককে গ্রেফতার ও প্রতিষ্ঠানটির কয়েক মিলিয়ন ডলার জব্দ করার পর প্রতিক্রিয়া জানায়। এ্যামচামের হংকং প্রেসিডেন্ট তারা জোসেফ সিএনএন বিজনেসকে বলেন আদতে হংকং ধারাবাহিকভাবে চীনের অংশ হয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম রেইনশ যিনি দেশটির ন্যাশনাল ফরেন কমার্স কাউন্সিলের সভাপতি হিসাবে ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলছেন চীনের ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থা’ নীতি এখন মৃত। এটি মার্কিন কোম্পানিগুলোর কাছেও মূলত একটি সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং হংকং’এ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। এর পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট বাইহেন কোম্পানিগুলোকে অর্থনৈতিক হাব হিসেবে পরিচিত হংকং’এ ব্যবসা অব্যাহত রাখবেন কি না তা মার্কিন কোম্পানিগুলোকে চিন্তা করে দেখার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু এও প্রশ্ন উঠেছে যে হংকং থেকে যদি মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা গুটিয়ে চলে যায় তাহলে বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে ১৪০ কোটি মানুষের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ মেয়াদি কৌশল কি হবে।