কিছু চামড়া ডাস্টবিনে, উদ্যোগ পুরো কাজে আসলো না
মো. আখতারুজ্জামান : দেশের মোট চামড়ার অর্ধেকও বেশি আসে কোরবানির ঈদ থেকে। বেশ কয়েক বছর ধরে কোরবানির ঈদের কাঁচা চামড়া বড় একটি অংশ নষ্ট হয়ে যায়। নষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এবার ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই উদ্যোগ তেমন কোনো কাজে আসেনি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এ বছরও রাজধানীতে চামড়ার দাম না পেয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার পোস্তা ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আশেপাশের বেশ কিছু আড়তের মোকামের সামনের প্রধান সড়কের দুই পাশে অনেক কাঁচা চামড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়। এস্কেভেটার দিয়ে চামড়া গাড়িতে তুলে দিচ্ছে পরিচ্ছন্নকর্মীরা। রাজধানীর মগবাজার এলাকাও রাস্তার পাশে চামড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে স্থানীয়রা জানান, গত বছরের চেয়ে এবারে রাস্তায় চামড়া ফেলে দেয়ার পরিমাণ কম।
কথা হয় রাজধানীর মৌসুমী কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী আফজাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান ঈদের দিন চামড়া সংগ্রহ করে রাতে পুরান ঢাকার আড়তে বিক্রি করতে নিয়ে আসি। প্রত্যেকটি চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় ক্রয় করা। আর আড়তের ব্যবসায়ীরা ২৫০ টাকা বলে। কয়েক ঘণ্টা পর সেই দামও বলে না আড়তদারেরা। তারা বলে যে এই চামড়া নষ্ট হয়েছে। পরে লোকসানে পড়ায় সারা রাত অপেক্ষা করি। শেষে চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে আসি।
যদিও সরকার লবণজাত প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় ৪০-৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩-৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। গত বছর ঢাকায় ৩৫-৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা ছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাঁচা চামড়া মনিটরিং সেলের প্রধান মালেকা খায়রুন্নেছা জানান, গতবছরের চেয়ে এবছর চামড়া সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা খুব ভালো হয়েছে। সারাদেশে কোথায় বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। ঢাকায় লাখ লাখ পশু কোরবানি হয়। সেই জায়গায় কিছু সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান জানান, লবণে কোনো সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা চাহিদা দিয়েছিলো ৮০ হাজার টনের আমরা ১২০ হাজার টন দিয়েছি। লবণের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারকে বেকাদায় ফেলার জন্য একটি চক্র রাজধানীতে ঈদের দিন রাতে হঠাৎ করে লবণের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বারের চেয়ে এবারে রাজধানীতে তুলনামুলকভাবে দিগুণ চামরা আসায় লবণের চাহিদা বেড়ে যায়। আর এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। একদিনে এটা হয়েছে মুলত পর্যবেক্ষণের কারণে। দেশে হাজার হাজার লবণের ডিলার রয়েছে এদেকে পর্যবেক্ষণে যে সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন সেটা বিসিকের নেই।
তিনি বলেন, রাজধানীতে কাঁচা চামরা দেশের কোথাও কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছে বা ফেলে দেয়া হয়েছে এমন সংবাদ আমার কাছে নেই।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, দেশে করোনা প্রকোপ বাড়লেও আন্তর্জাতিক চামড়ার বাজার গতবারের চেয়ে এবার একটু ভালো মনে হচ্ছে। আমরা বলেছিলাম যে ঢাকায় যাতে বাহিরের লবণ বিহীন চামড়া ঢুকতে না পারে। সেটা বাস্তবায়ন না হওয়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে। আড়তদারদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো তার থেকে বেশি চামড়া আসায় রাজধানীতে কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে আরও সচেতন হলে হয়তো বা এটা হতো না। ঢাকায় লবণ বিহীন চামড়া প্রতিটি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় ক্রয় করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বাজার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েক হাত বদল হয় প্রত্যন্ত এলাকার ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম পায় না। ফলে তারা বেশি দামে ক্রয়ে আগ্রহী হয় না।