পুরস্কার অহংকারি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করে, এটি ক্ষতিকর : ড. অমর্ত্য সেন দক্ষিণ এশিয়ায় নোবেল জয়ীদের মধ্যে ডিগ্রি ও পুরস্কারে এগিয়ে ড. ইউনূস
বিশ্বজিৎ দত্ত : দক্ষিণ এশিয়ার নোবেল জয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার ও ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন ড. মোহম্মদ ইউনূস। ভারতের ড. অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, কৈলাস সত্যার্থী, পাকিস্তানের প্রফেসর সালাম ও মালালা ইউসুফ জাইÑ কেউ মোহম্মদ ইউনূসের তিন ভাগের এক ভাগও পুরস্কার পাননি। উল্লেখ্য, ড. মোহম্মদ ইউনূস ২০২০ সালে অলিম্পিক লোরেল পুরস্কার পেয়েছেন।
ড. মোহম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত জীবনী, ইউনূস সেন্টার ও উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে প্রতি বছর গড়ে তিনি প্রায় ৫টি করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার পুরস্কারের সংখ্যা ১৩৪টি। তারপরে তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত পুরস্কার পেয়েছেন আরও ৩৬টি। সব মিলিয়ে নোবেল জয় ড. ইউনূসের পুরস্কারের সংখ্যা ১৫০টি।
তিনি জীবনের প্রথম পুরস্কার পান ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড। ২০০৬ সালে তিনি ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। আর এ সময়ে ড. ইউনূস বিশে^র বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় থেকে সম্মানিত ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন ৯০টি। অন্যদিকে অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী ড. অমর্ত্য সেন মোট পুরস্কার পেয়েছেন ১৪টি। সর্বশেষ তিনি ২০২১ সালে পেয়েছেন প্রিন্সেস অব অ্যাসটোরিয়াস অ্যাওয়ার্ড। ড. সেনের প্রথম পুরস্কার ১৯৫৪ সালে অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথের নামে স্মরণে দেয়া অ্যাডাম স্মিথ প্রাইজ। তিনি বিশে^র বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন ৬৪টি। অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান ১৯৯৮ সালে।
পাকিস্তানের অধ্যাপক আব্দুস সালাম ১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। এই পুরস্কারের পর তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন মোট ৩৮টি। ১৯৫০ সালে প্রথম স্মিথ পুরস্কার পান তিনি।
ভারতের কৈলাস সত্যার্থী ও পাকিস্তানের মালালা ইউসুফ জাই শান্তিতে নোবেল পান ২০১৪ সালে। এরপরে মালালা ইউসুফ জাই পুরস্কার পেয়েছেন ৪০টি। আর কৈলাস সত্যার্থী পুরস্কার পেয়েছেন ২৫টি। কৈলাস সত্যার্থী প্রথম পুরস্কার পান ১৯৯৩ সালে। পুরস্কারটির নাম ছিল অশোকা ফেলোশিপ। সর্বশেষ পুরস্কার পেয়েছেন ২০১৯ সালে মাদার তেরেসো মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড।
সর্বশেষ অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ড. বিনায়ক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নোবেল পান ২০১৯ সালে। তবে নোবেলের পর এ পর্যন্ত ৩টি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি এখনো কোন সম্মানিত ডক্টরেট ডিগ্রি পাননি।
পুরস্কার সম্পর্কে নোবেল জয়ী ড. অমর্ত্য সেন গত শনিবার ভারতের এনডিটিভিতে এক সাক্ষাতকারে বলেন, নোবেল পুরস্কার ছাড়াও বিশে^ অবদান রাখার জন্য আরো অনেক উপায় আছে। শুধুমাত্র নোবেল বা পুরস্কার দিয়ে কাউকে বিচার করা ভাল উপায় নয়। অনেক কিছু দিয়ে মানবতার উপকার করা যায়। অন্যের জীবনকে প্রভাবিত করা যায়। আমার নোবেলের অর্থ আমাকে একটি ভাল কাজে দান করার অর্থ যুগিয়েছে। কারণ আমার নিজের এতো অর্থ দেয়ার সামর্থ ছিল না।
নোবেল পুরস্কারের অর্ধেক অর্থ বাংলাদেশের প্রতীচি ও ভারতের প্রতীচিকে দান করেছি। তিনি একক পুরস্কারের সমালোচনা করে বলেন, একক পুরস্কারের মাধ্যমে অন্যের দ্বারা অহংকারি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যা সব সময় আমাদের খালি পুরস্কার পাওয়ার মন তৈরি করে দেয়। এটি ক্ষতিকর।