আগামী দশকে ড্রোনের বাজার হবে মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের
রাশিদ রিয়াজ : এবছরেই ভারতে ড্রোনের বাজার ১.২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আগামী বছর ভারতে ড্রোনের বিবিধ ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পাবে। পাইলট বিহীন এই আকাশযানটির বাজার বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হারেই বাড়বে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। এ বছর যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইসরায়েলের ড্রোন বিক্রি করে আয় দাঁড়াবে ২৮.৪৭ বিলিয়ন ডলার। গ্লোবাল মার্কেন ইন্টেলিজেন্স এন্ড এডভাইজরি ফার্ম বিআইএস রিসার্চ বলছে ওই তিনটি দেশের ড্রোন বিক্রির অন্তত সোয়া ৪ শতাংশ ভারত অনায়াসে দখল করতে পারে। দি প্রিন্ট
ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় কাশ্মীর সীমান্তে ড্রোন হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে এবং কয়েকটি ড্রোন গুলি করেও নামানো হয়েছে এমন তথ্য প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে। ভারতের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তারা বলছেন নিরাপত্তার দিক থেকেও এসব ড্রোন হামলার বিপরীতে এ্যান্টি ড্রোন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলছেন। গত সপ্তাহে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় ড্রোন রুলস ২০২১ নামে একটি খসড়া আইন প্রস্তাবিত আকারে উপস্থাপন করেছে।
এ প্রস্তাবের অন্যতম দিক হচ্ছে সারা ভারত জুড়ে অসংখ্য ড্রোন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। এসব ইনস্টিটিউট উৎপাদিত ড্রোনের ছাড়পত্র দেবে। ২০২৫এর মধ্যে ড্রোন পরিচালনায় অন্তত ৫ হাজার ব্যক্তিকে সুযোগ দেওয়া হবে। এছাড়া ভারতে ড্রোন আইন আরো সহজ করে তোলা হচ্ছে। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের চেয়ার এবং ইন্ড্রাস্টি কমিটি অন ড্রোনের প্রধান রাজন লুথরা আগামী বছর ভারতে ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহার ও এ প্রযুক্তির বিস্তার সহজে চোখে পড়বে। যদিও ভারতে ড্রোন শিল্প এখন নবজাতক পর্যায়ে তবে এ শিল্প সম্প্রসারণে ব্যাপক প্রস্তুতি চোখে পড়ছে। যে সব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ড্রোন তৈরির আবেদন করবেন তার প্রয়োজনীয় অনুমোদন, সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং একটি বাণিজ্যিক কোম্পানির প্রস্তুতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতে কৃষি, জাতীয় মহাসড়ক তৈরির মানচিত্র, রেলওয়ে ট্রাক মানচিত্র, বন পর্যবেক্ষণ ও নজরদারিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের গ্রাম অঞ্চলের জরিপে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করেন যেখানে ড্রোনের বিবিধ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখন্দ, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, পাঞ্জাব ও রাজস্থানে এই প্রকল্পের আওতায় ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ২০১৮ সালে ভারতের এফআইসিসিআই ও আরনস্ট এন্ড ইয়ংয়ের যৌথ এক জরিপে বলা হয় ড্রোন শিল্পের জন্যে ভারতে সরকারি ও বেসরকারিখাতে বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। মেক ইন ইন্ডিয়া ফর আনম্যানন্ড এয়ারক্রাফ্ট সিস্টেম নামে এ জরিপে বলা হয়েছে ড্রোন শিল্পের জন্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতারও চাহিদা রয়েছে ভারতে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অস্ত্রবাহী ড্রোন ও এধরনের ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে ভারতে ড্রোন প্রযুক্তি কতটা এগিয়েছে তা আগামী দিনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। গত ফেব্রুয়ারিতে বিএসএফ’র মহাপরিচালক রাকেশ আস্তানা বলেন ২০১৯ সালে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে ১৬৭ বার ও গত বছর একই সীমান্তে ৭৭ বার বিদেশি ড্রোনের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে। পাঞ্জাব ও জম্মু সীমান্তে ড্রোনের সাহায্যে অস্ত্র নামানোর ঘটনাও ঘটেছে।
বর্তমানে ভারত সামরিক মানের ড্রোন আমদানিতে বিশে^ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিচ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আর্মস ট্রান্সফার ডাটাবেস বলছে গত বছর বিশে^ মোট ড্রোন রপ্তানির ৬.৮ শতাংশ এসেছে ভারতে। সীমান্তে ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্র ও বিস্ফোরক চালান বা নজরদারি ঠেকাতে এখন পাল্টা ড্রোনের চাহিদা ভারতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত পাল্টা গোয়েন্দা নজরদারির জন্যে এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে এমন ড্রোন কিনতে চাচ্ছে বলে জননেট্টি টেকনোলজিস জানিয়েছে। এফআইসিসিআই বলছে ভারতে ড্রোন ও পাল্টা হামলার মত ড্রোনের বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ৪০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। আর এর অর্ধেক ড্রোনের ক্রেতাই হবে ভারতের ডিফেন্স অ্যান্ড হোমল্যান্ড সিকিউরিটি।