সব ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি প্রণোদনা ঋণ সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার পরামর্শ
সোহেল রহমান : করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। কিছু কিছু ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ঋণের অর্থ দ্বারা ঋণগ্রহীতার বিদ্যমান অপর কোনো ঋণের দায় সমন্বিত হচ্ছে। এছাড়াও মঞ্জুরীকৃত ঋণের টাকা ছাড়করণেও কোনো কোনো ব্যাংক সময়ক্ষেপণ করছে।
প্রণোদনা ঋণ বিতরণ এবং এর ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে এসব অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২৫ জুলাই) দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরিত এক চিঠিতে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রদত্ত প্রণোদনা ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিং করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে যাচাইয়ের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
‘নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর কারণে সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ মঞ্জুরীকৃত ঋণের অর্থ ছাড়করণ ত্বরান্বিত করা প্রসঙ্গে’ শীর্ষক চিঠিতে প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, কোভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনার কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি সঞ্চার, ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গতিশীলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। সুতরাং প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পরিপালন করা না হলে প্রণোদনা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে, যা কোনোভাবেই কাঙ্খিত নয়।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গত বছরের এপ্রিলে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে প্রণোদনা ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে সরকার। এর আওতায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের গত বছর সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীদের ৪ শতাংশ সুদে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। এসব ঋণের সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। বাকি সুদের টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার।
জানা যায়, প্রথম দফার ঋণ বিতরণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ বছর দ্বিতীয় দফায় প্রণোদনা ঋণের ৫৩ হাজার কোটি টাকা বিতরণের জন্য ইতোমধ্যেই ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোন্ ব্যাংক কত টাকা ঋণ দিতে পারবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে গত বছর চলতি মূলধন খাতে প্রণোদনা ঋণ নিয়ে কিছু কিছু উদ্যোক্তা তা ভিন্ন খাতে ব্যবহার করছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে। ঋণ গ্রহীতাদের কেউ কেউ অন্য ঋণ সমন্বয় করেছেন, কেউ ঋণের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন, কেউ জমি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন বা অন্য কোনো লাভজনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। যা সম্পূর্ণ নীতি বহির্ভূত।
ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসহ অন্যান্য প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে গৃহীত ঋণের অর্থ দ্বারা কোনোভাবেই অপর কোনো ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয় না করা; গ্রাহককে যে উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্যেই ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিয়মিত মনিটরিং করা এবং প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সুষ্ঠুভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘বিশেষ সেল’ গঠন-পূর্বক প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিতকল্পে মনিটরিং জোরদার করার জন্য ব্যাংকগুলোকে আগেই পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।