মন্ত্রিপরিভাগ বিভাগ ও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার পার্থক্য ১,৭০০ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ঋণ শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে গ্রাহক ও ব্যাংক পর্যায়ে বিশেষ ছাড় দেয়া হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ও হার বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩৭৪ কোটি টাকা এবং শতকরা হিসেবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ দশমিক ১২ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সর্বশেষ তথ্যমতে, সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ চলতি বছরের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৩৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০২০ সালের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪২ হাজার ৬৬৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং শতকরা হিসেবে খেলাপি ঋণের হার ছিল ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
অন্যদিকে সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো আদায় করেছে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আদায়ের হার ৬১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬০২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে গত ৭ বছর ধরে ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ)-এর আওতায় ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিচ্ছে ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’। কিন্তু তা সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ সন্তোষজনক পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর শিথিলতার পাশাপাশি চলমান কোভিড পরিস্থিতি এবং খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর একাধিক অবস্থান তথা নিজস্ব সমন্বয়হীনতা রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’-এর সম্পাদিত এপিএ অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অর্থবছর শেষে ছয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সম্পাদিত এপিএ’র আওতায় চলতি অর্থবছর শেষে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। সে হিসাবে উভয় চুক্তিতে খেলাপি ঋণের স্থিতির পার্থক্য ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ৫০০ কোটি টাকা শিথিল করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত এপিএ-তে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে অধিক পরিমাণ খেলাপি ঋণসহ আর্থিক খাতে বিরাজমান ৫টি সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে- ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত বৃহৎ জনগোষ্ঠী; রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অনুন্নত গ্রাহক সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা; বীমা সম্পর্কে জনগণের আস্থাহীনতা; পুঁজিবাজারে লেনদেন-পরবর্র্তী ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্টে দেরি হওয়া ও প্রশিক্ষিত বিনিয়োগকারীর অভাব।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- ভালো মানের ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা; প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা যেমন মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া; বীমা বিষয়ে ব্যাপক প্রচার ও বীমা খাতে প্রশিক্ষিত জনবল সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারে দক্ষ বিনিয়োগকারী সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ইত্যাদি।