ব্যাংকখাতে দাপটের দিনে শেয়ারবাজারে তিন রেকর্ড ইতিহাসে প্রথমবার ডিএসইএক্স সূচক ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্ট ছাড়ালো
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার আগের দিনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও সূচকের ব্যাপক উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে একদিনে তিন রেকর্ড হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথমবারের মতো রেকর্ড ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে।
ডিএসই সূচক ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫৩৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ইতিহাসের সূচকটির সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করেছে। যা ডিএসইএক্স সূচকের নতুন মাইলফলক। ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এটি এ যাবতকালের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান।
সূচক বাড়ায় ডিএসইর বাজার মূলধনের নতুন রেকর্ড গড়েছে। আগের দিনের চেয়ে বাজার মূলধন ৩ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা বেড়ে ৫ লাখ ৪১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, লেনদেনও হয়েছে দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মূল্য সূচকের এই মাইলফলক স্পর্শের দিনে শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো। ফলে বীমা ও বস্ত্র খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পরও প্রধান মূল্য সূচক অর্ধশত পয়েন্ট বেড়েছে।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অধ্যাপক শিবলীর কমিশন গত বছরের মে মাসে কমিশনের দায়িত্বভার গ্রহন করে। যখন করোনা ভাইরাস আতঙ্কে মানুষের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে ছিল ভীষণ ভয়। তবে কমিশন নানামূখী কার্যকর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেই ভয় কাটিয়ে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ভূমিকা রাখেন। যার নেতৃত্বে বাজারে এখন অংশগ্রহন অনেক বেশি এবং মূল্যসূচক উঠে এসেছে এক অনন্য উচ্চতায়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বর্তমান কমিশন নানা কার্যকরি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে শেয়ারবাজারে অংশগ্রহন বেড়েছে এবং ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরুহয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে। এতে প্রথম মিনিটেই ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ৫ হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরুকরা ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথমবারের মতো ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করে।
লেনদেন শুরুহতেই নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে যাওয়া ডিএসইর প্রধান সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সময়ের সঙ্গে আরও বাড়ে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫৩৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এটি এযাবতকালের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। অপরদিকে ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান মূল্য সূচকের এই মাইলফলক স্পর্শের দিনে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে ৩০টির দাম বেড়েছে। বাকি একটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে চলতি বছরের এপ্রিলে আবার বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ সময়ও কিছু বিনিয়োগকারী আবার বীমা কোম্পানির শেয়ার কেনেন। অধিক মুনাফার আশায় এ দফাতেও বীমার শেয়ার কেনা বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন। গতকাল ধস নামার মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস ধসের মধ্যে থাকল বীমা খাত। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দামে ব্যাপক দরপতন দেখা যায়। এই খাতের তালিকাভুক্ত ৫১টি কোম্পানির মধ্যে ১০টির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৪১টির।
চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার (ব্যাংক বন্ধ থাকায় রোববার শেয়ারবাজার বন্ধ ছিল) মাত্র সাতটি বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ৪৩টির। আর মঙ্গলবার ১১টি বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৩৯টির। বাকি একটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বীমা কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি অধিকাংশ বস্ত্র কোম্পানির শেয়ার দাম কমেছে। তালিকাভুক্ত ৫৮ বস্ত্র কোম্পানির মধ্যে ১৫টির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৪০টির দাম কমেছে। আর তিনটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
গত বীমা ও বস্ত্র খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম কমায় ডিএসইতে সব খাত মিলে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে প্রায় তার সমান সংখ্যক প্রতিষ্ঠান দরপতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৭৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭০টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবকটি মূল্য সূচকের উত্থানের সঙ্গে ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। বাজারটিতে দিনভর লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২ হাজার ১৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
বড় অঙ্কের এই লেনদেনের দিনে টাকার পরিমাণে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের ৮২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, জেনেক্স ইনফোসিস, ফু-ওয়াং সিরামিক, জিপিএইচ ইস্পাত, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৫৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮০ কোটি ১১ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩২৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪১টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা