রেমিটেন্সে মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় ২ শতাংশ প্রণোদনা
বিশ^জিৎ দত্ত : রেমিটেন্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা কিছু দিনের জন্য উঠিয়ে দেয়ার সুপারিশ করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। তাদের মতে, রেমিটেন্স বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ও বাজারে মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি করছে। দ্বিতীয় রেমিটেন্সে যে উদ্দেশ্যে প্রণোদণা দেয়া হয়েছিল তার স্বচ্ছতায় সমস্যা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ব্যাকগুলোতে তারল্য ছিল ১০৩ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালের এপ্রিলে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২০২ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে তারল্য বেড়েছে আড়াইগুন ও ইসলামী ব্যাংকে তারল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ গুন।
এই সময়ে ব্যংাকগুলোর রিজার্ভও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের ৬.৭৪ হাজার কোটির রিজার্ভ ২০২১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৮.২২ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকের এই অতিরিক্ত তারল্য ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। তাদের ঋণের সুদের হার কমে গেছে।
আবার আমানতের সুদের হারও কমে গেছে। সুদের হার কমলেও করোনার কারণে ঋণ বিতরণও হচ্ছে না। গত বছর শিল্প ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ শতাংশ। কিন্তু বিতরণ হয়েছে ৮ শতাংশ। করোনায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণও কমে গেছে।
সব মিলিয়ে বাজারে মুদ্রার যোগান বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদ্রার যোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজরে মূল্যস্ফীতিও ঘটেছে। এপ্রিলে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫.৫৬ শতাংশ। মানুষের জীবন মাত্রার ব্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১২ সালে জুলাইয়ে স্বাস্থ্যখাতে ব্যায় বৃদ্ধি ছিল ১৫৬ শতাংশ। ২০২০ সালে এটি হয়েছে ২০২ শতাংশ।
এ বিষয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফামিদা খাতুন বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ব্যাক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। এই সময়ে রিজার্ভ আমাদের সমস্যার সৃষ্টি করছে। আর রিজার্ভ কমাতে হলে রেমিটেন্স কমাতে হবে। রেমিটেন্সের ওপরে যে ২ শতাংশ প্রণোদণা দেয়া হয় তা বাতিল করতে হবে। অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেমিটেন্সে প্রণোদণা দেয়া হয়েছিল যে উদ্দেশ্যে সেটি হলো প্রবাসী যারা দেশে অর্থ প্রেরণ করেন তাদের পরিবারগুলো যেন এই করোনা পরিস্থিতিতে একটু ভাল থাকে। কিন্তু এখন যেভাবে রেমিটেন্স আসছে সেটি চিন্তার বিষয়। শ্রমিকদের বাইরেও অনেকে প্রণোদণার জন্য রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো রেমিটেন্স হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত বছর দেশে ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এর বিপরীতে আড়াই লাখ কোটি টাকা বাজারে ছাড়তে হয়েছে। তাতে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। আর প্রণোদনার অর্থ সরাসরি শেয়ার বাজারে প্রবেশ করছে। করোনায় অর্থনীতি মন্দা কিন্তু শেয়ার বাজার চাঙ্গা এটাই প্রমাণ করে এখানে সরকারের প্রণোদণার অর্থ প্রবেশ করেছে।
রেমিটেন্সের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নান সম্প্রতি বলেছেন, সকল রেমিটেন্সে প্রণোদনা দেয়া ঠিক নয়। সরকার প্রণোদনার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। যেসব শ্রমিক কষ্ট করে বিদেশে আয় করে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন তাদের কিভাবে প্রণোদনা দেয়া যায় সেটির একটি প্রক্রিয়া আমাদের বের করতে হবে। ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত বিনা প্রশ্নে প্রণোদণা প্রদানের বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা