৭ অগাস্ট পাইলট রান ১৪ অগাস্ট থেকে গণটিকা কার্যক্রম
শিমুল মাহমুদ : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ক্যাম্পেইনের আওতায় আপাতত এক দিন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তারপর সাত দিন বন্ধ থাকার পর আবার ক্যাম্পেইন চালু হবে। তবে চলমান টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিধিনিষেধের সময়সীমা বৃদ্ধি করায় গণটিকাদান কার্যক্রম ১৪ আগস্ট থেকে শুরু হবে।
ডা. খুরশীদ আলম বলেন, আমাদের বাকি সব পরিকল্পনা ঠিক আছে। লকডাউনের কারণে পরিবহণে সমস্যা। তাই ৭ আগস্ট পাইলট রান, আর ১৪ আগস্ট থেকে গণহারে টিকা কার্যক্রম শুরু। প্রথমদিন শুধু বয়স্ক, অগ্রাধিকার পাওয়া প্রতিবন্ধী ও অসুস্থদের টিকা দেওয়া হবে।
এরআগে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যসচিব ডা. মো. শামসুল হক বলেন, একেক দিন প্রায় ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। কর্মসূচির প্রথম দিন এ রকম পরিমাণ টিকাই দেওয়া হবে। সারা দেশে ৮১ হাজার ১৬৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দিতে কেন্দ্র থাকবে প্রায় ১৪ হাজার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, আপাতত বিশৃঙ্খলা এড়াতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিবন্ধন ছাড়া কাউকেই টিকা দেওয়া যাবে না। যাঁরা নিজেরা নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাঁদের নিবন্ধন করতে সহায়তা করবেন স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এমনকি যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাঁরা দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র করতে পারেন, সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র কর্তৃপক্ষকে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে দিনে তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একটি করে টিকাকেন্দ্র পরিচালনা করা হবে। সেখানে তিনটি বুথ থাকবে। পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিকাকেন্দ্র থাকবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, আক্রান্ত কারও করোনা নেগেটিভ হওয়ার চার সপ্তাহ বা এক মাস পর কোনো ধরনের তীব্র করোনা–পরবর্তী জটিলতা না থাকলে টিকা নিতে পারবেন। যাঁরা দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগছেন কিংবা ক্যানসারের জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন (কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও অন্যান্য), তারা যেকোনো ধরনের করোনা টিকা গ্রহণ করতে পারবেন।
যাঁদের হৃৎপি-ে রিং পরানো হয়েছে বা হৃৎপি-ে বাইপাস সার্জারির ইতিহাস রয়েছে কিংবা অন্যান্য হৃদ্ জটিলতায় ভুগছেন, তাদেরও টিকা গ্রহণে কোনো বাধা নেই। তবে টিকা গ্রহণের আগে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
যারা দীর্ঘমেয়াদি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, যেমন লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি তাঁদের টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে এই মুহূর্তে অ্যাকিউট জন্ডিসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যাঁরা বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে ভুগছেন, তাঁদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে কম। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে টিকা দেওয়া অত্যাবশ্যকীয়। কিডনি রোগী, এমনকি ডায়ালাইসিস চলছে, এমন রোগীও টিকা নিতে পারবেন। তবে টিকা গ্রহণের আগে কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
গর্ভধারণের ১৪ থেকে ৩৩ সপ্তাহের মধ্যে যেকোনো ধরনের কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করতে পারবেন (সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে)। তবে গর্ভধারণের সময় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের অন্য কোনো রোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টিকা গ্রহণ করা যাবে। অন্তঃসত্ত্বা মা করোনা টিকা গ্রহণ করলে গর্ভের শিশুও সুরক্ষা পাবে। এছাড়া, দুগ্ধদানকারী মায়েদের দেওয়া হচ্ছে অনেক দেশে। এতে কারও কোনো সমস্যা বা ক্ষতি হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং মায়ের কাছ থেকে বুকের দুধের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি শিশুর শরীরে প্রবেশ করে শিশুকেও সুরক্ষা দেবে।
যাঁদের প্রকট অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে ও যাদের টিকার কোনো একটি উপাদানে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে কিংবা আগে কোনো টিকা নিতে গিয়ে অ্যালার্জিজনিত জটিলতায় পড়েছেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করোনার টিকা নিতে হবে।
যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, তারা তা নিয়ন্ত্রণে এনে টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। করোনা জটিলতা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বেশি। তাই এমন রোগীদের দ্রুত রক্তচাপ সুগার নিয়ন্ত্রণে এনে টিকা নিতে হবে।
টিকা নেওয়ার পর মৃদু বা সামান্য জ্বর হতে পারে। হতে পারে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম করার মতো সমস্যা। টিকা দেওয়ার স্থানে অনেকের ব্যথা হয় বা ফুলে যায়। অনেকের গায়ে ব্যথা হয়, ক্লান্তিবোধও করেন কেউ কেউ। হতে পারে বমি বমি ভাব। অ্যালার্জিজনিত সমস্যার কথাও বলেন অনেকে। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে ভয় বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ গ্রহণেই দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
এক নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, টিকা নেওয়ার পর কেন্দ্রে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। বাসায় যাওয়ার পর যেকোনো রকম শারীরিক সমস্যা বা অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে টিকাদান কর্মীকে খবর দিতে হবে। প্রয়োজনে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করার পরামর্শ রইল।
মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার পরেও জরুরি কাজে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। একে অপর থেকে অন্ততপক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সাবান ও পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে দুই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে নিতে হবে।