মো. আখতারুজ্জামান : করোনার প্রভাবে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ভালো না হওয়ায় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। ফলে অলস অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থও ব্যাংকের টাকা বাড়িয়েছে। বাজারে বেশি টাকা চলে আসলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। এই অলস অর্থের লাগাম টানতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। যদিও বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা জমা আছে। এর মধ্য থেকে অলস পড়ে আছে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাংলাদেশ বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে ব্যাংকগুলো ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। তবে পদ্ধতিগত কারণে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার গতি করতে পেরেছে। এসব টাকার বিপরীতে ব্যাংকগুলো বাৎসরিক সুদ পাবে ৫৪ থেকে ৭৫ পয়সা হারে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের প্রথম নিলামে ১৮ ব্যাংক প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার আবেদন করে। এর বিপরীতে বার্ষিক ১ শতাংশের কম সুদে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথম নিলামে সাত দিন মেয়াদি বিলের মাধ্যমে বার্ষিক মাত্র শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ তথা ৫৪ পয়সা সুদে তোলা হয়েছে ১ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। আর ১৪ দিন মেয়াদি বিলে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ তথা ৭৫ পয়সা সুদে।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ঐ দিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ তথা ২ পয়সা সুদে সাত দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা রেখেছিল। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ ছিল। বাজারে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে নিলামের বিষয়টি অবহিত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে একবারে অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অলস এই অর্থের বিপরীতে কোনো সুদ পায় না ব্যাংক। এতে করে অধিকাংশ ব্যাংক এখন আমানত নিতে অনীহা দেখাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর বাজারে তারল্য বাড়াতে নানা নীতিসহায়তা দিলেও ঋণের চাহিদা বাড়েনি। যে কারণে অলস অর্থ বাড়ছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংকের মোট দায়ের একটি অংশ বিধিবদ্ধ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। এর মধ্যে বর্তমানে নগদে রাখতে হয় সাড়ে ৪ শতাংশ, যা সিআরআর হিসেবে বিবেচিত। করোনা শুরুর আগে গত বছরও সাড়ে ৫ শতাংশ সিআরআর রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে বিভিন্ন বিল ও বন্ডের বিপরীতে বিধিবদ্ধ তারল্য বা এসএলআর রাখতে হচ্ছে আগের মতোই ১৩ শতাংশ। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা