মাদারগঞ্জে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ একনেকে ৯টি প্রকল্প অনুমোদন
সোহেল রহমান : জামালপুরের সোলার পার্কে ‘মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ এবং ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ৫-জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’সহ ৯টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে ‘জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি’ (একনেক)। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৯২৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেয়া হবে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ব্যয় করা হবে ১৩৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ১ হাজার ১৮৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা নেয়া হবে বৈদেশিক ঋণ থেকে।
এছাড়া একটি প্রকল্পের ১ম সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে ৫৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে জামালপুরের সোলার পার্কে ‘মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভারতীয় নমনীয় ঋণে (এলওসি-৩) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করবে রাষ্ট্রায়ত্ত ‘রূরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ (আরপিসিএল)। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নের পরিমাণ হচ্ছে ৩১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা, আরপিসিএল দেবে ৭৬ কোটি ৭৬ হাজার টাকা এবং অবশিষ্ট ১ হাজার ১১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঋণ নেয়া হবে ভারত থেকে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত।
বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ২ হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা (এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২ হাজার ১৪৪ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং টেলিটকের অর্থায়ন ৬০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা) ব্যয়ে ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫-জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন প্রকল্প’(প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত); ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’(প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত); ৯২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩য় পর্যায় প্রকল্প’(প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত); ৮৬১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলী ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতু প্রতিস্থাপন প্রকল্প (রংপুর জোন) প্রকল্প’ (প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত); ৬৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্প’(প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত); ৪৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাগেরহাট-রামপাল-মংলা জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নয়ন প্রকল্প’(প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত); ১০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা (এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ও বৈদেশিক ঋণ ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) ব্যয়ে ‘চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট-৪ (অতিরিক্ত অর্থায়ন) (এলজিইডি অংশ) প্রকল্প’ (প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত); ৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘দেশী ও বিদেশী উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প’(প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত)।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এছাড়া সভায় ‘উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’-এর (১ম সংশোধিত) প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় ৫৯ কোটি ৯ লাখ টাকা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ২ বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় প্রস্তাব ছিল ৯৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে মূল প্রস্তাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এখন এর মেয়াদকাল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।