৫শ টাকার চামড়া রপ্তানি হয় ৫ হাজার টাকায় চামড়ার গুড় পেটে যাচ্ছে রপ্তানিকারকদের
মো. আখতারুজ্জামান : কয়েক বছর ধরে দেশের কাঁচা চামড়া নিয়ে চলছে নানা ধরনের গড়িমসি আসছিলো একটি চক্র। ফলে অতিমূল্যবান এই পণ্যটির জায়গা হয়েছে ডাস্টবিনে। তবে দাম কম হলেও এ বছর কিছুটা ভালো চিত্র দেখা গেছে।
যদিও রাজধানীর পুরোনার ঢাকায় ঈদের পরের দিন কিছু কাঁচা চামড়া রাস্তায় পরে থাকে দেখা গেছে। দেশে ৬০ ভাগ চামড়া সংগ্রহ করা হয় কুরবানির ঈদে। গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার ন্যূনতম মূল্য দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অথচ মাত্র ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনে সেই চামড়া ট্যানারি মালিকরা রপ্তানি করছেন সর্বনি¤œ ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তবে কাঁচা চামড়া বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তবে তাকে রপ্তানির উপযোগী করা হয়। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যয়ের পরিমাণ দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ সেন্ট থেকে দেড় মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম দাঁড়ায় ৪৩ থেকে ১২৯ টাকা। আমাদের দেশে সাধারণত একটি গরুর আকার ভেদে চামড়া ১৫ ফুট থেকে ৪০ বর্গফুট, মহিষ ২০-৪৫ ফুট, ছাগলের চামড়া ৪-৫ ফুট হয়ে থাকে। এ হিসেবে প্রতিটি লবণযুক্ত গরু-মহিষের চামড়ার দাম সর্বনি¤œ ৭০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ১শ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
আর একটি লবণযুক্ত ছাগলের চামড়ার দাম ২০০ থেকে ৬৫০ টাকা হতে পারে। তবে দেশের ব্যবসায়ীরা গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার বেশি দামে কিনেন না। আর সবচেয়ে বড় ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে গেলে ৫০ টাকার বেশি দাম পাওয়া যায় না। (সময়ের আলো)
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে যেখানে ৬ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ হাজার ৩ কোটি টাকার রপ্তানি হয়েছে। সেই হিসেবে এই খাতে ১ বছরের ব্যবধানেই ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকার বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। গত অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় লবণযুক্ত চামড়া রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ শতাংশ।
চলতি বছরের জুলাইয়েই ৭৫০ কোটি টাকার চামড়া রপ্তানি হয়েছে। এদিকে গত (২০২০-২১) অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এদিকে গত জুলাইয়েও ২ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত চামড়া খাত। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক থেকে এ খাতে বিতরণ করা পুরোনো ঋণ ৫ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণকৃত ঋণের প্রায় পাঁচ ভাগের চার ভাগই খেলাপি হয়ে পড়েছে। বাকি ১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত রয়েছে। (যুগান্তর অনলাইন)
ঋণের ভারে জর্জরিত চামড়া ব্যবসায়ীরা যাতে ঋণ নিতে পারে সেজন্য পবিত্র ঈদুল আজহার আগে ব্যবসায়ীদের ঋণ নেওয়ার পথ সহজ করে দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ নিয়মিত থাকলেই যে কেউ চামড়া কিনতে ঋণ নিতে পারবেন। ঋণ নিতে কোনো টাকা জমা দিতে হবে না। আর যাদের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে, তারা ৩ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে ঋণ নিয়মিত করতে পারবেন। (প্রথম আলো অনলাইন)
এ বছর কাঁচা চামড়া ক্রয়ের জন্য ব্যবসায়ীদের ৫৮৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো। চামড়া ক্রয়ের জন্য স্বল্পমেয়াদি এ ঋণ করে সরকারি ৫ ব্যাংক ও বেসরকারি ৩ ব্যাংক। যদিও এর আগের বছর কাঁচা চামড়া ক্রয়ের জন্য ৬৪৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিলেও বিতরণ করেছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকার বিপরীতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ শূন্য। (মানবজমিন অনলাইন)
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বছর এএসকে ইনভেস্টমেন্ট, মেসার্স কাদের লেদার কমপ্লেক্স, আমিন ট্যানারি লিমিটেড, লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইউনিট-২), কালাম ব্রাদারসকে ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। এবছর এসব প্রতিষ্ঠান মোট ১ কোটা বর্গফুট ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানি করতে পারবে। বাংলানিউজ