শোভন দত্ত : প্রান্তিক এবং পিছিয়ে পড়া যুব গোষ্ঠীর ওপর এ অতিমারির প্রভাবের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রযুক্তিগত বৈষম্য। সর্বোপরি করোনা ও সার্বিক প্রেক্ষাপট একটি বড় অংশকে বিচ্ছিন্ন যুব সমাজে পরিণত করছে।
মঙ্গলবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের আয়োজনে ‘বাংলাদেশে বিযুক্ত যুব সমাজ : কে, কেন ও কীভাবে’ শীর্ষক সংলাপে বক্তাদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। সংলাপটির সহযোগিতায় ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), বাংলাদেশ।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের কনভেনর ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।
সংলাপে ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী বিশেষ অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সংলাপ পরিচালনা করে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. তৌফিক ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মাধ্যমের যুব প্রতিনিধিরা যুক্ত ছিলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, বাংলাদেশের যুব সমাজের খুবই উদ্ভাবনী শক্তি আছে। তারা উদ্যোক্তা হিসেবে কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। একই সঙ্গে লক্ষ্য করি আরও একটি যুব সমাজ রয়েছে, যারা মূলধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে আছে। যারা নিজ ইচ্ছায় হোক কিংবা সামাজিক কিংবা প্রথাগতভাবে পিছিয়ে আছেন। যাদের আমরা বলি বিযুক্ত যুব সমাজ।
তিনি বলেন, নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন যুব সমাজ নিয়ে এ আলোচনার আয়োজন করেছে। এ আলোচনায় চারটি বিষয়কে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে- ‘বিচ্ছিন্ন যুব সমাজ’ একটি অর্থবহ প্রত্যয় কি না; বিচ্ছিন্ন যুব সমাজের অন্তর্ভুক্ত কারা এবং কেন; অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থা থেকে তরুণদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ পর্যালোচনা এবং গতানুগতিক যুবকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ও নীতির পাশাপাশি এ বিচ্ছিন্ন যুব সমাজের জন্য অর্থবহ ও কার্যকর সমাধান অনুসন্ধান।
সার্বিক পর্যালোচনায় বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে এ যুব সমাজকেই চিহ্নিত করা হয়েছে আলোচনায়। কিন্তু চলমান করোনা অতিমারির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে দেশের এ যুব সমাজের ওপর। এ প্রভাবের মাত্রাও ভিন্ন ভিন্ন। প্রান্তিক এবং পিছিয়ে পড়া যুব গোষ্ঠীর ওপর যার মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্য এ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সর্বোপরি একটি বিচ্ছিন্ন যুব সমাজে পরিণত করছে।
যুব সমাজের এ বিচ্ছিন্নতাবোধ সমাজে নানা অসংগতি তৈরি করছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে যুব সমাজের এ বিচ্ছিন্নতাকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আগামীতে এ বিষয়ে জরিপ হওয়া প্রয়োজন। তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিযুক্ত যুব সমাজকে কীভাবে মূলধারায় নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে আরও গবেষণা ও সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।