অস্থির চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনায় সাধারণ মানুষের আয় কমায় ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজধানীতে দীর্ঘদিন থেকে গরীবের চাল খ্যাত মোটা চালের দাম ৫০ টাকার ওপর। দেরিতে হলেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
করোনায় অস্থির থাকা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে সরকার। দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে চাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। আগে আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। তবে এ সুবিধা তিন মাস অর্থাৎ আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক কমানোর পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
বাজারে চালের দাম কমাতে ১৫ লাখ টন চাল আমদানিসহ খোলা বাজারে বিক্রির (ওএমএস) বিক্রি কার্যক্রম। গত ২৫ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১২ দিনের জন্য বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম শুরু হয়।
জানা যায়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিশেষ ওএমএস চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে ওএমএস কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হয়। এর ফলে দেশের বাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে।
টিসিবি তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি সরু চালের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা, মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫৮ এবং মোটা চাল ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। অথচ ২৫ জুলাইয়ের আগে প্রতি কেজি সরু চালের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫২ থেকে ৫৬ এবং মোটা চাল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর ও মালিবাগ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। যা গত ২৫ জুলাইয়ের আগেও ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাঝারি মানের চালের দাম উঠেছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম শুরুর আগে মাঝারি চালের দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং সরু চাল ছিল ৬৪ থেকে ৭০ টাকা।
দিনাজপুরের মেসার্স জামাল অটো রাইস মিলের মালিক মো. জামাল উদ্দীন জানান, বর্তমানে বেশি দামে ধান ক্রয় করতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে চাল বিক্রি করতেছি। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতে করে চালের দাম কমবে। আর চালের দাম কমলে আমাদের ক্ষতি হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে ভারত থেকে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে দশ লাখ টন চাল আমদানির সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
চালে শুল্ক কমানোর বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের বলেন, দেশের বাজারে প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি শুল্ক কমানোর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় আমাদের অনুরোধ করেছে। ওই অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা এ পরিপত্র জারি করেছি।
বৃহস্পতিবার নওগাঁয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, চালের বাজার স্থিতিশীল করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শিগগিরই এর সুফল দৃশ্যমান হবে।
চলমান বোরো সংগ্রহ অভিযানে ইতিমধ্যে সাড়ে ৮ লাখ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। চাল সংগ্রহের সময় আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে শতভাগ চাল সংগ্রহ হয়ে যাবে। ৩১ আগস্টের মধ্যে যারা চাল দিতে ব্যর্থ হবে তাদের জামানাত বাজেয়াপ্ত করা হবে বলেও তিনি জানান।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ১১ আগস্ট পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ ১৬ লাখ ৩৪ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ১২ লাখ ৩ হাজার টন, গম ২ লাখ ২৪ হাজার টন এবং ধান ১ লাখ ৬৪ হাজার টন। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও