১৪৪ দেশে ওষুধ রপ্তানিতে গত অর্থবছরে আয় ১৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার
মো. আখতারুজ্জামান : প্রতিনিয়ত বিশ্ববাজারে বাড়ছে বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা। যোগ হচ্ছে নিত্য নতুন দেশ। দেশের অভ্যন্তরীণ ৯৭ শতাংশ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারে প্রভাব বিস্তার করছে ওষুধখাত। তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনার।
দশ বছরের ব্যবধানে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে এখাতে ১৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ইপিবি সূত্রে রপ্তানি আয়ের এই তথ্য জানা গেছে।
গত অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রপ্তানি করে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার আয় হয়। এটি আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। করোনা মহামারিতে দেশের বিভিন্ন শিল্প খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও ওষুধশিল্পে রপ্তানি আয় বেড়েছে। রপ্তানি পণ্যের তালিকায় কভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহূত ওষুধের অন্তর্ভুক্তি, গুণগতমানের উন্নয়ন ও সরকারের নীতি সহায়তার কারণে এ খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মূলত ম্যালেরিয়া, যক্ষা, ক্যানসার, কুষ্ঠ, অ্যান্টি-হেপাটিক, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, কিডনি ডায়ালাইসিস, হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক্যাল, আয়ুর্বেদিক ও হাইড্রোসিলের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট ওষুধ রপ্তানি করে থাকে। গত অর্থবছরে এ তালিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ যুক্ত হয়। ফলে এ শিল্পে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ আরও বেড়েছে।
জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণটি আমদানি করছে। ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত এপ্রিলে দেশটি রেমডেসিভির ও এর উপকরণ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে ওষুধ রপ্তানিতে বাংলাদেশের আরও সুযোগ বেড়েছে।
ইপিবির পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি করে ৩৭৫ কোটি টাকা আয় করেছিল বাংলাদেশ। গত এক দশকে তা চারগুণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। করোনা মহামারিতে অন্য সব খাত যখন ভুগছে, ঠিক তখনই চাঙ্গাভাব ধরে রেখেছে দেশের সম্ভাবনাময় ওষুধশিল্প। কাঁচামাল আমদানিতে কিছুটা প্রভাব পড়লেও অভ্যন্তরীণ বাজারে বেড়েছে ওষুধের চাহিদা। বিশেষ করে করোনাসংক্রান্ত ওষুধের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির তথ্য মতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৬৯টিরও বেশি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা রয়েছে।
মহামারির সময়ে উৎপাদনকারী বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে ও বিদেশে রোগীদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ সরবরাহ করেছে। সরকারের এই ওষুধগুলোকে অনুমোদন দেওয়ার সাহসী সিদ্ধান্তটি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক উপকারে এসেছে।
বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ পর্যায়ের নিয়ন্ত্রিত বাজারে তিন মাসের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছে। যেখানে প্রবেশ করতে স্বাভাবিক অবস্থায় অন্তত দুই বছর সময় লাগতো। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণটি আমদানি করেছেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) তথ্য অনুযায়ী মোট বাজারের ১৮ দশমিক আট শতাংশ নিয়ে শীর্ষে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল। এছাড়াও ইনসেপটা, বেক্সিমকো, অপসোনিন, রেনাটা ও এসকেএফের দখলে রয়েছে যথাক্রমে ১০ দশমিক দুই, আট দশমিক পাঁচ, পাঁচ দশমিক ছয়, পাঁচ দশমিক এক ও চার দশমিক পাঁচ শতাংশ বাজার।